
উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় মানা গ্রামের কাছে শুক্রবার সকালে ভয়াবহ তুষারধসের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সড়ক নির্মাণে নিয়োজিত প্রায় ৫৭ জন শ্রমিক বরফের নিচে আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১০ জনকে উদ্ধার করে মানা গ্রামের নিকটবর্তী সেনা শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তুষারধসটি বদ্রীনাথ ধাম থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে, সীমান্ত সড়ক সংস্থার (বিআরও) একটি ক্যাম্পের কাছে ঘটে। শ্রমিকরা সেখানে সড়ক নির্মাণের কাজ করছিলেন। বিআরও-র নির্বাহী প্রকৌশলী সি আর মীনা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থলে তিন থেকে চারটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে, তবে প্রবল তুষারপাতের কারণে সেখানে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে। উদ্ধারকাজে ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি), সেনাবাহিনী, রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ), জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং জেলা প্রশাসনের দলগুলি অংশ নিয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) উত্তরাখণ্ডসহ বেশ কয়েকটি পার্বত্য অঞ্চলের জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে, যেখানে শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ভারী বৃষ্টির ফলে স্থানীয় রাস্তায় জলাবদ্ধতা, নিচু এলাকায় জল জমা, আন্ডারপাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, দৃশ্যমানতা কমে যাওয়া এবং ট্রাফিক বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, কাঁচা সড়কে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে।

উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ড রাজ্যটি হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত এবং প্রায়শই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। ২০২১ সালে চামোলি জেলায় একটি ভয়াবহ তুষারধসের ঘটনা ঘটে, যেখানে প্রায় ২০০ জন মানুষ প্রাণ হারান এবং দুটি নির্মাণাধীন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হিমালয় অঞ্চলে অতিরিক্ত অবকাঠামো নির্মাণ, যেমন সড়ক, রেলপথ, টানেল, বাঁধ এবং বিমানবন্দর নির্মাণ, প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে এবং দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পানিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস কাব বলেন, “এভাবে বলতে গেলে, আপনি নিজেই নিজেকে বিপদের আরো কাছে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।”
এছাড়া, হিমবাহ থেকে সৃষ্ট হ্রদগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা হিমবাহ সৃষ্ট বন্যার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৯০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদগুলির সংখ্যা ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরাখণ্ডের ৭৮টি তহশিলের মধ্যে ২৬টি হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদের কারণে ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়তে পারে।

বর্তমান তুষারধসের ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে যে, হিমালয় অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার মধ্যে সুসমন্বয় প্রয়োজন। উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে, এবং প্রশাসন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।