লকডাউন ঘোষণা হতেই পরিযায়ী শ্রমিকদের অসহায় ভিড়,গত বছরের আতঙ্কের ছবি দিল্লির বাসস্ট্যান্ডে

লকডাউনের কথা ঘোষণা হওয়ার পরেই দেখা যায়, বাস টার্মিনাসে গিজগিজ করছে শ্রমিকদের ভিড়। সামাজিক দূরত্ব দূরের কথা, কোনও রকম কোভিড বিধিই মানা হচ্ছে না। সংক্রমণের হটস্পট হয়ে উঠছে বাসস্ট্যান্ডই। শুধু তাই নয়, এই পরিস্থিতিতে বাসের ভাড়াও বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে দশ গুণ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছেন বাসমালিকরা। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে অসহায় পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলতে গিয়ে এক শ্রমিককে বলতে শোনা যায়, ”আমরা দিন আনি দিন খাই। লকডাউন ঘোষণা করার আগে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল আমাদের কিছুটা সময় দেওয়া। সুযোগ বুঝে চালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যেখানে ২০০ টাকার মধ্যেই আমরা বাড়ি চলে যেতে পারি, সেখানে খরচ বাড়িয়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে! কী করে বাড়ি ফিরব আমরা?” একই ছবি গাজিয়াবাদ সীমান্তেও। সেখানেও শয়ে শয়ে শ্রমিকদের ভিড়। এক শ্রমিকের কথায়, ”লকডাউনের সময় কাজ থাকবে না। সরকারও কোনও সাহায্য করবে না। সেই কারণেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। কেননা লকডাউনের মেয়াদ বাড়লে না খেতে পেয়ে মরতে হবে।” গত বছর লকডাউনের ধাক্কায় রোজগারপাতি প্রায় তলানিতে। এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি অনেকেই। এমন অবস্থায় আরও একটা লকডাউন, এক সপ্তাহের জন্য হলেও, তা আতঙ্কিত করেছে শ্রমিকদের। কারণ এর মেয়াদ বাড়লে পরিস্থিতি আবার আগের বছরের মতো হয়ে দাঁড়াবে। সেই আশঙ্কা এড়াতে পারছেন না কেউই।গত বছরের লকডাউনে ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের কী অবস্থা হয়েছিল, সে স্মৃতি এখনও দগদগে অনেকের মনেই। তুমুল এক অব্যবস্থার ছবি সামনে এসেছিল দেশের নানা প্রান্ত থেকে। আচমকা রুটিরুজি বন্ধ হওয়ায় ঘরে ফিরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন বহু শ্রমিক। এবার সেই অসহায়তার চেনা ছবিই যেন ফিরে আসছে আবারও। দিল্লিতে কোভিড পরিস্থিতি কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তাই ফের লকডাউন ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। যদিও তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশে বার্তা রেখেছেন, কেউ যাতে রাজ্য না ছাড়েন, সরকারি ভাবে দায়িত্ব নেওয়া হবে সকলের, কিন্তু সোমবার থেকেই গাজিয়াবাদের আনন্দবিহার বাস টার্মিনাসের চেহারা বলে দিচ্ছে, প্রশাসনের কথায় ভরসা করতে পারছেন না শ্রমিকরা। এই পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্রকে আরজি জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার সকালে এক টুইটে তিনি লেখেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত পরিযায়ী শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কিছু অর্থসাহায্য করা। যদিও সেই সঙ্গে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে তাঁর প্রশ্ন‌, করোনা সংক্রমণের জন্য সরকার যেখানে সাধারণ মানুষকেই দোষ দিচ্ছে, সেখানে এমন ‘জনকল্যাণমুখী’ পদক্ষেপ কি সরকার করবে?

Latest articles

Related articles