
কাশ্মীরের পবিত্র নিসর্গে মোড়া পহেলগাঁও যেন একদিনে পাল্টে গেল। মঙ্গলবারের বিভীষিকাময় জঙ্গি হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই পুরো উপত্যকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে শোক আর ক্ষোভ। নিহত নিরীহ পর্যটকদের স্মরণে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বুধবার একযোগে দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মসজিদ থেকে ঘোষণা আসে ‘শাট ডাউন’-এর, যার প্রতি সাড়া দিয়েছেন প্রায় সকলেই।
মাত্র দু’দিন আগেও যেখানে হাসি আর আনন্দে মুখর ছিল পর্যটকদের আনাগোনা, সেই স্থানই আজ নিঃশব্দ বেদনায় স্তব্ধ। শহরের অলিতে-গলিতে জমেছে প্রতিবাদের মিছিল, স্থানীয় ভাষায় ভেসে আসছে কান্না মেশানো প্রতিধ্বনি। মোমবাতি হাতে, হাতে পোস্টার তুলে পথে নেমে এসেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে, ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’, ‘আমরা ভারতীয়’, স্পষ্ট একতা আর মানবতার বার্তা। এখনও যারা আটকে আছেন সেই পর্যটকদের জন্য বুক উজাড় করে দাঁড়িয়েছেন এলাকার তরুণেরা — আসিফ, আদিল, ও তাঁদের মতো অনেকে।
হোটেল মালিক ও দোকানদারদের কথায়, পর্যটকদের কোনওরকম অসুবিধা যাতে না হয়, তার জন্য তাঁরা সকলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে আগামী ১৫ দিনের জন্য। তাদের দাবি, এ লড়াই অর্থনীতি নয়, এটা মানবতার প্রশ্ন।
স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী আসিফ বুরজ়া বলেন, “যা ঘটেছে তা শুধু পর্যটন বা ব্যবসার ক্ষতি নয়, এটা একেবারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। লজ্জায় আমরা মাথা নিচু করেছি। নিরীহ মানুষদের রক্তপাত সহ্য করা যায় না।” তাঁর কণ্ঠে স্পষ্ট, “ওরা তো শুধু বেড়াতে এসেছিল। পরিবারগুলোর দিকে তাকালেই চোখ ভিজে আসে।”
প্রতিবাদের ঢেউ শুধু রাস্তায় নয়, সমাজমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল হয়েছে মোমবাতি মিছিল, যেখানে লেখা— ‘নিষ্পাপদের হত্যা বন্ধ করো’, ‘পর্যটক আমাদের অতিথি, তাদের হত্যা নয় সম্মান দাও।’ অনেকেই বলছেন, “আমরা কিছু খাইনি সারাদিন, শুধু বিচার চাই। আমাদের আত্মা কাঁদছে।”

মঙ্গলবার বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। অভিযোগ, ধর্মীয় পরিচয় দেখে বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় ঘোড়া চালক সইদ আদিল হুসেন শাহ, যিনি পর্যটকদের রক্ষা করতে গিয়ে জঙ্গির হাতে প্রাণ দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তিনি বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন, গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর শরীর।
সইদের মতো সাধারণ মানুষও এই দুঃসময়ে হয়ে উঠেছেন বীর। তাঁদের মানবিকতা, সাহস, আর প্রতিবাদেই আজ কাঁপছে পহেলগাঁও, কাঁপছে সারা ভারত।
এই প্রতিবাদ শুধু একটি ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয় — এটা একতার প্রতীক, এটা শান্তির আকুল আহ্বান।