পাকিস্তানে পরিত্যক্ত মন্দিরে আক্রমণের ঘটনায় গ্রেফতার ২৬ কিন্তু মধ্যপ্রদেশে মসজিদ ভাঙচুরের ঘটনায় উল্টে গ্রেফতার মুসলিমরা

সাইফুল্লা লস্কর : একটি তথাকথিত ইসলামী রাস্ট্র অন্যটি সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। কিন্তু কোথাও যেনো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে তথাকথিত ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের থেকেও বেশি ধর্মীয় ভাবাবেগ ব্যাবহার সর্বক্ষেত্রে বর্তমান প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে গত অর্ধ দশকে। কোথাও যেন সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সরকার এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ধর্মনিরপেক্ষতাকে অতটা গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। কিন্তু তথাকথিত ধর্মীয় একটি রাষ্ট্রতে ঠিক তার বিপরীত প্রবণতা লক্ষ্য করা গেল। গতকাল পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া নামক প্রদেশের কারাক জেলার ১৯৪৭ সালের পর থেকে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত একটি মন্দিরে আক্রমণ চালায় বহু দুষ্কৃতী। তারা আক্রমণ চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেয় ওই মন্দিরটিতে। পুলিশ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এই মন্দিরটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সরকার এটিকে হিন্দু সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে।

আজ পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট মন্দির আক্রমনের বিষয়টিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। তাদের তরফ থেকে এক বিচারপতি এই ঘটনায় জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্যদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শীগ্রই রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে ৫ ই জানুয়ারি। ইতিমধ্যেই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যে বহু ধর্মীয় নেতাও রয়েছেন। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত ব্যক্তিদের কে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ থেকে বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা থেকে বহু ধর্মীয় নেতা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এই ঘটনার।

উল্টোদিকে গত মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর গৌতমপুরা এলাকায় নামাজ চলাকালীন একটি মসজিদে হামলা চালায় গেরুয়া সন্ত্রাসীরা। মসজিদের ক্ষতিসাধন করে বহুলাংশে। মসজিদের বাইরে রাখা বহু মুসল্লির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। কিন্তু মধ্য প্রদেশ পুলিশ গেরুয়া দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। কিন্তু ঘটনার শিকার স্থানীয় বহু মুসলিমের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োগ করে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতার ও করা হয়েছে।

খুব কম সময়ের ব্যবধানে ঘটায় এই দুই ঘটনাকে তুলনামূলক দৃষ্টিতে দেখছেন অনেকে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়ে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা কি সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে? রাষ্ট্রের সমস্ত জনগণ কি পেয়েছে এই ধর্মনিরপেক্ষতার সুফল? কেন ধর্মীয় গোঁড়ামিতে আমরা পাকিস্তানের থেকেও আজ বহু এগিয়ে?

Latest articles

Related articles