
প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত মহাকুম্ভ মেলায় ত্রিবেণী সঙ্গমে কোটি কোটি পুণ্যার্থী ধর্মীয় স্নানের উদ্দেশ্যে নদীর তীরে সমাগম করে। এর ফলস্বরূপ পরিবেশগত নানা সমস্যারও সূচনা হয়েছে। বিশেষ করে, নদীর জলে ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি ও বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন চাহিদার (BOD) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষ উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বছর মহাকুম্ভে প্রতিদিন ধর্মীয় অনুষ্টানের সময়, লক্ষ লক্ষেরও বেশি ভক্ত ও সন্ন্যাসী তীরে সমাগম করেন। এই স্নানকে আধ্যাত্মিক মোক্ষ লাভের এক মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে, এই বিশাল জনসমাগম পরিবেশগত দিক থেকে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) ও ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (NGT) কর্তৃক সংগৃহীত সাম্প্রতিক নমুনায় স্পষ্ট হয়েছে যে, স্নানের জলে দূষণের মাত্রা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গেছে।
পরীক্ষার ফলাফল থেকে জন্য যাচ্ছে, ১২-১৩ জানুয়ারিতে সংগৃহীত নমুনায় BOD এর মাত্রা ৪ mg/L রেকর্ড করা হয়েছে যা স্বাভাবিকের তুলনার (অনুমোদিত সীমা ৩ mg/L) মাত্রাতিরিক্ত বেশী।
এই BOD-র মান থেকে বোঝা যায় যে, নদীর জলে অর্গানিক বর্জ্যের ঘনত্ব অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জলের প্রাকৃতিক বিশুদ্ধীকরণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।
দ্বিতীয় বড় সমস্যা হল ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি।
স্নানের জন্য অনুমোদিত ফেকাল কলিফর্মের নিরাপদ সীমার (২,৫০০ ইউনিট/১০০ mL) থেকে অনেক অনেক গুণ বেশী।
বিভিন্ন ঘাটে, বিশেষ করে শাহী স্নানের দিনে, লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে ব্যাকটেরিয়ার ঘনত্ব অনুমোদিত সীমার অনেক বেশি ধরা পড়েছে।
অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়া উপস্থিতির ফলে নদীর জলে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সম্ভাবনা মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
স্থানীয় পয়ঃনিষ্কাশন কেন্দ্র (STP) যদিও সক্রিয় ছিল, তবে মহাকুম্ভের সময় অতিরিক্ত জনসমাগম ও বর্জ্যের চাপের কারণে নিয়ন্ত্রিত নিষ্কাশন সম্ভব হয়নি ফলে জলে মলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রচুর সংখ্যক মানুষের স্নানে যুক্ত হওয়ার ফলে, স্বাভাবিকের তুলনায় জলদূষণের মাত্রা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
CPCB ও UPPCB কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে নিয়মিত তথ্য আপলোডে বিলম্ব দেখা দিয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (NGT) পূর্বে নির্দেশ দিয়েছিল যে, মহাকুম্ভের সময় জলের নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা অপরিহার্য। তবে, UPPCB কর্তৃপক্ষ বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা মাফিক তথ্য সংগ্রহ করে দিতে ব্যর্থ হওয়ায়, ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে তাদের ব্যাখ্যা আদায় করা হয়েছে।
২০ ফেব্রুয়ারিতে UPPCB-এর প্রতিনিধিরা নতুন তথ্য ও কার্যকর পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, যা প্রশাসনিক জবাবদিহিতার একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত করতে পারে জনগণ।
গত ডিসেম্বর ২০২৪:
মহাকুম্ভের সময় নদীর জলের গুণমান নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি ও অতিরিক্ত বর্জ্য নিষ্কাশনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এনজিটি পূর্বেই জলের নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিল, যাতে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
১৯ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে UPPCB-এর সদস্য সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভার্চুয়ালি হাজির হতে নির্দেশ দিয়ে, জলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করা পদক্ষেপ সম্পর্কে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
এনজিটি আশাবাদী যে, প্রশাসনিক অস্পষ্টতার দূরীকরণ এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জলদূষণের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।
স্বাভাবিক ভাবেই ধর্মীয় উৎসব ও মহাকুম্ভের সময় জনসমাগমের কারণে জলদূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
অতিরিক্ত ক্ষতিকারক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অর্গানিক বর্জ্যের কারণে বিভিন্ন জলজ রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।
মহাকুম্ভ ও অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবের সময় জলের নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজ নিয়মিতভাবে চালু রাখতে হবে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ও অতিরিক্ত পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দূষণের মাত্রা কমানো যেতে পারে।
CPCB, UPPCB ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিৎ ওয়েবসাইটে নিয়মিত ও স্বচ্ছ তথ্য আপলোড নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ অবগত থাকে।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এনজিটির পূর্ববর্তী ও বর্তমান নির্দেশাবলী মেনে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাঝে স্নানের জলে দূষণের সমস্যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। যদিও প্রশাসনিক পর্যায়ে কিছু লোক লোকদেখানো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তথাপি জনসমাগম ও অতিরিক্ত বর্জ্যের কারণে জলদূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে তা কতটা কার্যকর ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেটা ভবিষ্যতই বলতে পারবে।