
পুজা সিং-এর জীবনসংগ্রাম: ইচ্ছাশক্তির জয়গাথা
১৬ বছর বয়সী পুজা সিং দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। জন্ম থেকেই মূক ও বধির। শৈশবেই রিকশাচালক বাবাকে হারায়। মা ঘর ছেড়ে চলে যানআর ফেরেননি। দিদা অঞ্জলী সিং-এর কোলে পিঠেই সে বড় হয়েছে। সংসার চলে দিদার মাসিক ১,০০০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা ও পরিচারিকার কাজের সামান্য আয়ে। ভাঙা টিনের ঘরে বৃষ্টির জল চোয়ে, শীতে কাঁপেন ছেঁড়া কম্বলে। অনেক দিন আধপেট খেয়ে থাকতে হয়।
স্কুলে প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ সুবিধা নেই। খাদিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ে বিশেষ কোনও শিক্ষক বা সংস্থান নেই। তবু পুজা বইয়ের পাতায় ডুবে থাকে। দিদার কোলে মাথা রেখে নিজেই শেখার চেষ্টা। শিক্ষক সুলভা মণ্ডল বলেন, “ওর দৃঢ়তা দেখে আমরা বিস্মিত। মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ভাবিনি।” পড়াশোনার সময় নেই নির্দিষ্ট—যখন ইচ্ছে, তখনই বই হাতে নেয়।
ছোটবেলায় হৃদপিণ্ডের ফুটো ধরা পড়ে, দুর্গাপুরে অপারেশন হয়। এখনও পুরোপুরি সুস্থ না। মাঝেমধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। স্কুল পরের বছর পরীক্ষার পরামর্শ দিলেও পুজার জেদ—”এবারই দেব।” দিদার সঙ্গে ইশারায় কথা বলে, চোখেই ফুটে ওঠে তার প্রত্যয়।
প্রতিবেশী মালতি সিং বলেন, “এত অভাবের মধ্যেও মাধ্যমিক দেওয়া—এ কী সাহস!” মামী মমতা মণ্ডলের আশা, “প্রশাসন এগিয়ে আসবে।” দিদা অঞ্জলী চিন্তিত, “আমি তো বয়সে নুয়ে পড়েছি, ওর ভবিষ্যৎ কী হবে?” স্কুলে বিশেষ সহায়তা না থাকলেও পুজার লড়াই সেখানকার মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা।
পুজার জীবনের প্রতিটি ধাপ যেন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় সমাজের কাছে: প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সংস্থান কি আছে? দারিদ্র্যের মুখোমুখি হওয়া শিশুদের পাশে দাঁড়ায় কে? তার সংগ্রাম শুধু একটি পরীক্ষার জন্য নয়, এটি সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর লড়াই।
পুজা প্রমাণ করে, শারীরিক সীমাবদ্ধতা বা আর্থিক সংকট ইচ্ছাশক্তিকে দমাতে পারে না। তার চোখের দৃঢ়তা বলে, “হার মানিনি।” এখন দেখার, সমাজ ও প্রশাসন কি এই আলোকিত পথে সঙ্গী হবে, নাকি তাকে একাই লড়তে হবে…।