লকডাউনে সংসার চালাতে পাঠানো সাহায্যে টাকা, কৃষিঋণের কিস্তি হিসাবে কাটলো SBI ব্যাঙ্ক মালদাতে

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20200502-WA0092

সাইফুদ্দিন মল্লিক : লকডাউনে গরীবের অ্যাকাউন্টে টাকা দেয়ার আর্জি সর্বস্তরে, কিন্তু দেশের ব্যাঙ্ক গুলি উল্টে কৃষকের খাতা থেকে টাকা কেটে নিচ্ছে। গরীব কৃষক মালেক মসদরের কৃষি ঋণের ১০ হাজার কেটে নিয়েছে SBI ব্যাঙ্ক। মালেকের বাড়ি মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির রামপুর গ্রামে। লকডাউনে বাড়ির করুন অবস্থাতে উক্ত টাকা মালের ছেলে বহু কষ্টে জোগাড় করে বাবার অ্যাকাউন্টের পাঠিয়েছিল। উক্ত টাকা ফেরত এবং কিস্তির আর কোন টাকা না কাটে তার জন্য ব্লক প্রশাসন ও ব্যাংক ম্যানেজারকে লিখিত আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু কোনো আশ্বাস বা লিখিত পায়নি।
মালেক, SBI ব্যাঙ্কের হরিশ্চন্দ্রপুর শাখা থেকে বরাবরই কৃষিঋণ নিয়ে জমি চাষ করে থাকে। ২০১৫ সাল থেকে কৃষিঋণ নিয়ে আসছে এবং ঠিক সময়ে তা পরিশোধও করেছে। ২০১৭ সালের জুন মাসে ৩৫ হাজার টাকা কৃষিঋণ নিয়ে জমি চাষ করেন। কিন্তু সেই টাকা ফসল নষ্টের কারনে এখনও পরিশোধ করতে পারেনি। ২০১৭ সালের আগষ্টের বন্যা, ২০১৮ সালের ফনি ঘূর্ণিঝড়ে পরপর দুই বছর তা সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ২০১৯ সালে সামান্য পরিমাণ ফসল হলেও তা ধারদেনা শোধ করতে সব শেষ হয়ে যায়। চলতি বর্ষ 2020-তে ফসল এখনো মাঠে আছে। ফসল উঠলে তা বিক্রি করে কৃষিঋণ পরিশোধ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। করোনাতে সব কিছু স্তব্ধ করে দিয়েছে। ১০ হাজার টাকা কেটে নেওয়াতে চরম অর্থনেতিক সংকটে পড়েছেন। দেশের ৫০ জন ধনীর ৬৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ মোকুব করেছে বিজেপি সরকার, সেই সরকার মহামারী ও সংকটের সময়ে গরীবের বাঁচার পথ বন্ধ করে দিছে।

দুই ছেলে এক মেয়ে ও স্বামী-স্ত্রী সহ মোট পাঁচ জনের পরিবার। দুই ছেলে ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে লকডাউনে আটকে পরে ছে। লকডাউন চলাকালীন বাবার একাউন্টে এক ছেলে মালিকের কাছ থেকে সাহায্য হিসাবে অগ্রিম নিয়ে ১০ হাজার টাকা পাঠায়। lব্যাংক কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্ট হোল্ড করে পুরো ১০ হাজার টাকাই কেটে নেয়। লকডাইনে সংসার অচল হয়ে পড়েছে, বাজার হাট, কোন কিছু কেনা কাটা সব কিছুই বন্ধ কৃষক মালেকের।
বাস্তবে গরীব ও কৃষকের জন্য সরকাররের কিছুই সাহায্য নেই। অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছে এই করোনা সংকটময় পরিস্থিতিতে কোনো EMI ও ঋনের কিস্তি কাটা যাবে না। অথচ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাকে কোনো তুয়াক্কা না করে এক গরীব চাষির কৃষিঋণের কিস্তি হিসাবে টাকা কেটে নিচ্ছে সরকার। ব্যাংক ম্যানেজার অয়ন শাহা জানান, কৃষিঋণের কিস্তি স্থগিতের এরকম কোনো নির্দেশিকা আসেনি। ২০১৭ সালে কৃষি ঋণ দুই বছর কেটে গেলেও এখনো পর্যন্ত স্বইচ্ছায় কিস্তি দেইনি, একাউন্টে টাকা ঢুকতেই ১০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। ঋণ কিস্তি ও EMI নিয়ে সরকারের ঘোষনা কি মিথ্যা ?
সমস্যা থেকে বাঁচতে মালেক মিয়া প্রশাসনের দপ্তরে ছুটোছুটি করছে। হরিশচন্দ্রপুর-১ নম্বর বিডি অফিস অভিযোগ গ্রহণ করেছেন, বলেছেন দেখছি বিষয়টা। কিন্তু হরিশচন্দ্রপুর থানা কোন রকম অভিযোগ গ্রহণ করেনি। উল্টে IC সঞ্জয় দাস বলেছেন, আপনি ঋণ নিয়েছে পরিশোধ করবেন, বেকার অহেতুক সমস্যা সৃস্টি করছেন।

রামপুর গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ সামিম জানান, মালেক একজন ছোটো গরীব চাষি। চাষবাস করেই চলে তার সংসার। লকডাউনে ভিন রাজ্যে আটকে থাকা এক ছেলে বাবর একাউন্টে ১০ হাজার টাকা পাঠালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একাউন্ট হোল্ড করে কৃষিঋণের কিস্তি হিসাবে ১০ হাজার টাকা কেটে নেয়। এখন সে প্রশাসনের দপ্তরে শুধু ছোটাছুটি করছে। পাচ্ছে না কোনো ভরসা। লকডাইনে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা মালেকের। একদিকে বাবা-মা বাড়িতে অর্থাভাব ও খাদ্য সংকটে দিন কাটাচ্ছে অপর দিয়ে দুই ছেলে ভিন রাজ্যে লকডাউনে আটকে আছে। পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক ১০ হাজার টাকার কাটার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর