ভারতে বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগ জনকঃ মার্কিন সংস্থা ‘ফ্রিডম হাউস’

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

তাবরেজ আনসারি। সিএএ বিরোধী আন্দোলন।
তাবরেজ আনসারি। সিএএ বিরোধী আন্দোলন।

এনবিটিভি ডেস্কঃ  ‘ফ্রিডম হাউস’ সংস্থা যেটি মার্কিন সরকারের পরিচালিত হয়ে থাকে। এই সরকারী সংস্থা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে এক উদ্বেগ জনক তথ্য উঠে এসেছে। তাদের প্রতিবেদনে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন, মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, কৃষকদের লক্ষ্যবস্তু, সাংবাদিক ও কর্মীদের উপর ক্র্যাকডাউন এবং পেগাসাস স্নুপিং কেস সম্পর্কিত বিষয়গুলি তুলে ধরে।

 ‘ফ্রিডম হাউস’র সাম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের বিচার বিভাগ, মুসলিম, লাভ জিহাদ তত্ত্ব এবং ভারতে সাংবাদিকদের অমানবিক অত্যাচার সম্পর্কে কী বলা হয়েছে তা জেনে নেব।

বিচার ব্যবস্থাঃ  

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রায় বিজেপির পক্ষে গিয়েছে। যেমনটাই ভোট প্রচারে লাগামহীন ভাবে প্রচারণা করে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক বাবারি মসজিদের জায়গায় হিন্দু মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার ২০১৯ সালের সিদ্ধান্ত।  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একজন পণ্ডিত ও বিশিষ্ট সমালোচককে জামিন অস্বীকার করার ২০২০ সালের সিদ্ধান্ত। নিষিদ্ধ মাওবাদী গোষ্ঠীকে সমর্থন করার অভিযোগ। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে যেখানে ন্যায় বিচার পেতে খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে। বিচার বিভাগের নিম্ন স্তরের মানুষ দুর্নীতিতে জর্জরিত। এবং আদালতগুলি ক্রমবর্ধমান রাজনীতিকরণের টুল কীট বা যন্ত্রাংশের মত কাজ করছে।

সিএএ আইনঃ

ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার হুমকির মুখে রয়েছে বলে এই প্রতিবেদনে বলা হয়।  গত ২০১৯ সালে সংসদে  নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) গৃহীত হয়।  যেখানে প্রতিবেশী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে অমুসলিম অভিবাসী এবং উদ্বাস্তুদের ভারতীয় নাগরিকত্বের বিশেষ ছাড় পত্র দেয়। একই সময়ে সরকার  ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর)-  তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল।

অনেক পর্যবেক্ষক বিশ্বাস করেন যে, এনপিআর- করার উদ্দেশ্য হল মুসলিম ভোটারদের কার্যকরভাবে অবৈধ অভিবাসী হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা। কেননা পূর্ব পুরুষের জন্ম সার্টিফিকেট জানতে চাওয়ার কথা বলা হয়। এদিকে অনথিভুক্ত অমুসলিমরা CAA-এর অধীনে একটি দ্রুত-ট্র্যাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য হবে। অন্যদিকে মুসলিমদের পক্ষে নাগরিকত্ব হারিয়ে বসার সম্ভাবনা অনেকটাই থেকে যায়।

২০১৩ সালে আসাম রাজ্যে নাগরিক নিবন্ধন চূড়ান্ত হওয়ার পরে আসামের প্রায় দুই মিলিয়ন বাসিন্দার নাগরিকত্বের অবস্থা সন্দেহের মধ্যে রয়ে গেছে। ২০২১ সালে অবৈধ বাসিন্দা হিসাবে ঘোষণা করা প্রত্যাশিতদের জন্য ডিটেনশন ক্যাম্প নির্মাণ করা অব্যাহত ছিল। আসাম একটি উল্লেখযোগ্য মুসলিম সংখ্যালঘু জনসংখ্যার আবাসস্থল। সেখানেই বিজেপি স্বাশিত সরকার কোপ বশিয়ে মুসলিম জনগণকে সমস্যার মুখে ফেলে দিয়েছে।

লাভ জিহাদ তত্ত্বঃ

২০২০ ও ২০২১ সালে বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন বেশ কয়েকটি রাজ্য “লাভ জিহাদ”-এর কথিত অনুশীলনকে রোধ করার জন্য আইন পাস বা প্রস্তাব করে।  একটি ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব যার অনুসারে মুসলমানরা হিন্দু মহিলাদেরকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্য নিয়ে বিয়ে করে। আইনটি কার্যকরভাবে আন্তঃধর্মীয় বিবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। আন্তঃধর্মীয় দম্পতিদের জন্য আইনি শাস্তি, হয়রানি এবং সহিংসতার ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

  সাংবাদিকদের অবস্থাঃ

একজন মুসলিম সাংবাদিক সিদ্দিক কাপান তিনি একজন দলিত মহিলার কথিত গণধর্ষণ কভার করার চেষ্টা করার জন্য যায়। তাকে ২০২০ সালে অক্টোবর মাসে গ্রেপ্তার করে। ফৌজদারি অভিযোগ ছাড়াও সাংবাদিকরা তাদের কাজের সময় হয়রানি, মৃত্যুর হুমকি এবং শারীরিক সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকে। কাশ্মীরের সাংবাদিক ফাহাদ শাহকে বারংবার জেলে পাঠানও হচ্ছে একটা প্রতিবেদন লেখার জন্য। এই ধরনের আক্রমণ খুব কমই শাস্তি পায়। অনেক সময় কিছু পুলিশ জড়িত বা সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে থাকে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা কমিটির মতে ২০২১ সালে সাংবাদিকদের উপর পাঁচটি মারাত্মক হামলার খবর পাওয়া গেছে। যে কোনো দেশের জন্য ভয়ানক।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর