
১৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডোজ), যা টেসলা প্রধান এলন মাস্কের নেতৃত্বে পরিচালিত, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের “ভোটার টার্নআউট বৃদ্ধি” প্রকল্পে বরাদ্দকৃত ২১ মিলিয়ন ডলার সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুদান বাতিলের ঘোষণা করে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে প্রশ্ন তোলেন, “ভারতে ভোটার টার্নআউটের জন্য আমরা ২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছি কেন? তাদের তো প্রচুর টাকা আছে। তাদের ট্যারিফ এত বেশি যে আমরা সেখানে ব্যবসা করতে পারি না”।

ডোজের এক্স (টুইটার) পোস্টে বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের টাকা নিম্নলিখিত খাতে ব্যয় হওয়ার কথা ছিল, যা এখন বাতিল করা হলো”। বাতিলকৃত তালিকায় বাংলাদেশে “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা” প্রকল্পে ২৯ মিলিয়ন ডলার এবং নেপালে ৩৯ মিলিয়ন ডলার সহ মোট ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত। ডোজের দাবি, এসব অর্থ “সন্দেহজনক রাজনৈতিক কার্যক্রমে” ব্যয় হওয়ার ঝুঁকি কমানোই এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য।

বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র অমিত মালব্যিয়া এই তহবিল বাতিলকে “ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ” বলে অভিহিত করেন। তিনি জর্জ সোরোস ও তার ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের সাথে কংগ্রেসের যোগসূত্র টেনে বলেন, “২০১২ সালে নির্বাচন কমিশন আন্তর্জাতিক নির্বাচনী সংস্থা আইএফইএস-এর সাথে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে, তা ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিদেশি প্রভাবের দরজা খুলে দিয়েছে”। মালব্যিয়ার মতে, ইউপিএ সরকারের আমলে এই ধরনের চুক্তির মাধ্যমে “ভারতবিরোধী শক্তি” দেশের প্রতিষ্ঠানগুলিতে অনুপ্রবেশ করেছিল।

কংগ্রেস এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জিজ্ঞাসা করে, “২০১২ সালে যখন এই তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছিল, তখন তো কংগ্রেসই ক্ষমতায় ছিল। তাহলে নিজেদের নির্বাচনী সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তারা কেন বিদেশি তহবিল নেবে?”। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস.ওয়াই. কুরেশি স্পষ্ট করে বলেন, ২০১২ সালের সমঝোতা স্মারকে কোনো আর্থিক বাধ্যবাধকতা ছিল না—এটি শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান বিনিময়ের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
এই বিতর্কের কেন্দ্রে আছে কনসোর্টিয়াম ফর ইলেকশনস অ্যান্ড পলিটিক্যাল প্রসেস স্ট্রেন্দেনিং (সিইপিপিএস), যা ইউএসএআইডি-এর অর্থায়নে গঠিত একটি অলাভজনক সংস্থা। ভারতের নির্বাচন কমিশন ২০১২ সালে আইএফইএস-এর সাথে যে সমঝোতা করে, তা সিইপিপিএস-এর অধীনেই ছিল বলে বিজেপি দাবি করে। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসএআইডি-এর বাজেট কাটছাঁটের নীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে, যা গত কয়েক মাসে বহু প্রকল্প বাতিলের দিকে নিয়ে গেছে।

ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশে ২৯ মিলিয়ন ডলারের “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা” প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা দেশটিতে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচিত হয়েছে। নেপালে “আর্থিক ফেডারেলিজম” ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৯ মিলিয়ন ডলারও বাতিলের তালিকায় রয়েছে।

এই ঘটনা ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি এলন মাস্কের সাথে টেকসই উন্নয়ন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, তবুও ডোজের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে এই বিতর্ক ভবিষ্যতে বিদেশি তহবিল ও এনজিও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ককে আরও তীব্র করতে পারে।