প্রয়াত পার্থ সেনগুপ্তের এক অজানা কাহিনী

 

কলমে- আলি আকবর

ছবিতে দেখছেন একটি বালিকা, যে প্রয়াত পার্থ সেনগুপ্তের ছবি নিয়ে বসে আছে, ওর নাম ‘রোকেয়া’। গল্পটি মূলত এই বালিকাটিকে নিয়ে। কয়েকদিন হলো মারা গেছেন। এপার বাংলা- ওপার বাংলার মুসলিম মনীষীদের জীবন চরিত্র তুলে ধরতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যিনি ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন লেখক ও প্রাবন্ধিক, বিশ্বকোষ পরিষদের কর্ণধার পার্থ সেনগুপ্ত। তাঁকে সবসময় বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের সভায় ও মুসলিম গুণীজনদের স্মরণসভায় বক্তৃতা দিতে দেখা যেতো। রাজ্যের মুসলিম বুদ্ধিজীবিদের সঙ্গে তাঁর এক আত্মিক সম্পর্ক ছিল। এদিন সল্টলেক ফাল্গুনি আবাসনে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করতে উপস্থিত হন কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ হাসান ইমরান, সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহঃ কামরুজ্জামান সহ এক প্রতিনিধি দল।

আবাসনের ভিতরে প্রবেশ করতেই সাক্ষাৎ হল তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র নীলাদ্রি সেনগুপ্তের সঙ্গে, ঘরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলল ওঁনার স্ত্রী শিবানী সেনগুপ্তের, দেখা হল কনিষ্ঠ পুত্রবধূ সুতপা সেনগুপ্তের সঙ্গে। হঠাৎ নীলাদ্রি বাবু হাক দিলেন রোকেয়া এদিকে এসো, ও রোকেয়া এদিকে এসো। অবাক হয়ে গেলাম এই বাড়িতে রোকেয়া নামের কাউকে ডাকতে দেখে। অনেককাল আগে থেকেই জানতাম পার্থবাবু বেগম রোকেয়ার জীবন চরিত্র নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন। বিভিন্ন স্থানে রোকেয়ার স্মৃতি স্তম্ভ তৈরিতে তিনি প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। রোকেয়া নিয়ে তাঁর ভাবনা চিন্তা ছিল সুদূর প্রসারী। দেখলাম একটা বালিকা ভিতরের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো নীলাদ্রি বাবু বললেন আমার মেয়ে রোকেয়া। বাবা ওর নাম রেখেছিল রোকেয়া। উপস্থিত আমরা সবাই যেন খানিকটা হতকচিত হয়ে গেলাম। সবাই খানিকটা সামলে নিয়ে যেন সমস্বরে বলে উঠলাম, বাহ্ পার্থ বাবুর মননে কর্মে খুব মিল আছে। নিজের নাতনির নাম রোকেয়া রেখে তিনি বেগম রোকেয়ার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। উপস্থিত বিশিষ্ট জন পার্থ বাবুর মতো এমন একজন ব্যক্তির সমাপ্ত না করা কাজ গুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে নীলাদ্রি বাবুকে আবেদন করেন। এবং যে কোন সমস্যায় পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

পার্থ বাবুর লেখা ও সম্পাদিত বিভিন্ন বই পুস্তক সবটাই মানিকতলার পুরানো বাড়ির অফিসে সংরক্ষিত আছে বলে নীলাদ্রি বাবু জানান। নীলাদ্রি বাবু বলেন মানিকতলায় পুরানো বাড়ির পাশে একটি মসজিদে এক সময় একটি গন্ডগোল হয় বাবা দাঁড়িয়ে থেকে মসজিদে নামাজের ব্যবস্থা করেছিল। সেদিন মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরা লোকটাকে দেখে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল। সুফি ফতেহ আলি ওয়েসি রহঃ এর মাজার শরীফের জমি বেদখলের বিরুদ্ধে তিনি একাধিকবার সরব হয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

মেয়ের নাম রোকেয়া, সমস্যায় পড়তে হয় না? হাসতে হাসতে নীলাদ্রি বাবুর জবাব একবার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে তো নাম শুনে কোন মতে পুজো দেওয়া যাবে না বলে দিল। তারপর আমরা বললাম, আমার দাদুর নাম কালীচরণ সেনগুপ্ত আমার বাবার নাম পার্থ সেনগুপ্ত তখন পুজো দিয়ে দিলো। একবার তো ডাক্তারের চেম্বারে নাম লিখিয়ে বসে আছি তখন মেয়ের নাম এলো, দেখলাম বলছে বেগম রোকেয়া। একটু আধটু অসুবিধা হলেও বাবার দেওয়া নাম সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছি অকপটে বললেন রোকেয়ার বাবা নীলাদ্রি সেনগুপ্ত ও মা সুতপা সেনগুপ্ত। সবশেষে বলি পার্থ বাবুর বাড়িতে রোকেয়াদের আতিথেয়তা ছিল মনে রাখার মতো। ঘরের এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পার্থ বাবুর স্মৃতি গুলো উপস্থিত সকলকে আরো একবার পার্থ বাবুর কথা মনে করিয়ে দিল। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে পার্থবাবুর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে বললেন উপস্থিত গুণগ্রাহীরা। ভেদাভেদের এই দুনিয়ায় পার্থ বাবুর মতো এমন মানুষ সমাজে দেশে আজ বড়ো দরকার।

Latest articles

Related articles