ইরানের চাবাহার বন্দরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: ভারতের কৌশলগত ও আর্থিক সংকট
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার জালে জড়িয়েছে ইরানের চাবাহার বন্দর। এই সিদ্ধান্তে ভারতের জন্য তৈরি হয়েছে কৌশলগত ও আর্থিক চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও সন্ত্রাসবাদে মদতের অভিযোগে চাপ বৃদ্ধির অংশ হিসাবে চাবাহার বন্দর প্রকল্পকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে। এর ফলে বন্দরটিতে ভারতের বহু কোটি টাকার বিনিয়োগ ও মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্যিক প্রবেশাধিকার হুমকির মুখে।
চাবাহার বন্দর ভারতের জন্য মধ্য এশিয়া, আফগানিস্তান ও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার। পাকিস্তানকে এড়িয়ে এই রুট ব্যবহার করে গত বছর ৪৩% বৃদ্ধি পেয়েছে পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা। ২০২৩-২৪ সালে ৮৪ লক্ষ মেট্রিক টন কার্গো ও ৯০,০০০ টিইইউ কন্টেনার পরিবহণ করেছে ভারত। ত্রিপাক্ষিক চুক্তি (ভারত-ইরান-আফগানিস্তান) অনুযায়ী, বন্দরটি আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ করিডোরের মাধ্যমে মুম্বইকে ইউরেশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছে।
২০১৮ সালে চাবাহারের পরিচালনাধিকার পায় ভারতীয় সংস্থা আইপিজিএল। ১০ বছরের চুক্তিতে বন্দর উন্নয়নে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় প্রকল্পের কাজ থমকানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই ইরানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য কমেছে: ২০১৮-১৯ সালে ১,৩০০ কোটি ডলার আমদানি (প্রধানত তেল) থেকে ২০১৯-২০ সালে নেমে দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি ডলারে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি এবং হামাস, হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীকে সমর্থন করছে। তবে ভারতের জন্য চাবাহারের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। ১২ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে মোদী-ট্রাম্প বৈঠকে এই ইস্যু আলোচ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত-মার্কিন কৌশলগত সম্পর্ক ও মোদী-ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সৌহার্দ্য সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি হতে পারে।
আর্থিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘস্থায়ী হলে ভারতের বন্দর উন্নয়ন ও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার বাধাগ্রস্ত হবে। মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তানে প্রবেশে ইরানের সহযোগিতা অত্যাবশ্যক। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের মতে, “চাবাহারের উন্নয়ন বৃহত্তর বিনিয়োগের পথ খুলে দেবে।” কিন্তু মার্কিন নীতি বদলে এখন সেই স্বপ্ন অনিশ্চিত।
চাবাহার ইস্যুতে ভারতের কূটনৈতিক নমনীয়তা ও মার্কিন সমন্বয় কতটা সম্ভব, তা নির্ধারণ করবে এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে নয়াদিল্লির ভবিষ্যৎ ভূমিকা। মোদীর ওয়াশিংটন সফর এখন সমস্ত আশার কেন্দ্রবিন্দু।