
গত বিধানসভা ভোটে ‘খেলা হবে’ স্লোগানের ব্যবহার নিয়ে তৃণমূল প্রচারে ঝড় তুলেছিল, যা বিরোধীদের কাছে ভোট-সন্ত্রাসের হুমকি হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। এই বিতর্কের স্মৃতি আবার ফিরে এসেছে মালদহে, যেখানে একটি ফুটবল প্রতিযোগিতার মঞ্চ থেকেই তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যে আলোড়ন তোলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ভিঙ্গল মাঠে অনুষ্ঠিত ফুটবল প্রতিযোগিতায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি উপস্থিত ছিলেন। সেই মঞ্চ থেকে তৃণমূল সভাপতি জিয়াউর রহমানকে আইসির পাশে বসিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা করতে শোনা যায়, “খেলায় আমরা দেখি, বিরোধীরা আটকানোর জন্য পায়ে মারার চেষ্টা করে। পায়ে মারলে রেফারি লাল কার্ড দেখায়। সামনে বিধানসভা নির্বাচন আসছে। বন্ধু, ভাই, কর্মীরা তৈরি হও। খেলা হবে। সেখানে কোনও রেফারি থাকবে না। কোনও লাল কার্ড থাকবে না। নিজেরা নিজের মতো করে তৈরি হও।” এই মন্তব্যে তৃণমূল নেতৃত্ব ভোট প্রক্রিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার ও নির্বাচনী কৌশল নিয়ে নতুন রণনীতি প্রস্তাব করেছে বলে মনে হচ্ছে।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস একযোগে তৃণমূলকে কটাক্ষ করে এই বক্তব্যের নিন্দা করেছে। বিজেপি নেতা উজ্জ্বল দত্ত বলেন, “আইসিকে পাশে বসিয়ে তৃণমূলের নেতারা বড় বড় কথা বলছেন। ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছেন। বলছেন, রেফারি থাকবে না! রেফারি থাকবে কী করে? পুলিশ তো আপনাদের পাশে বসে রয়েছে। তাই পুলিশের কাছ নিরপেক্ষতা আশা করছি না। তবে মনে রাখবেন, ২০২৬ সালের ভোটে কিন্তু খেলা হবে। জনগণই সে খেলা খেলবেন। পুলিশ প্রশাসন সরে গেলে দু’মিনিটিও টিকবে না দলটা।”
এছাড়া, জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদবও জানান, “চাঁচলের এসডিপিও-কে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।” এসব মন্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়, বিরোধীরা এই রকম উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যকে নির্বাচনী পরিবেশে হুমকি ও ভয় দেখানোর চেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করছে।
পরবর্তী সম্ভাব্য প্রভাব
তৃণমূল নেতারা নিজেদের বক্তব্যকে নির্বাচনী রণনীতির অংশ হিসেবে উপস্থাপন করলেও বিরোধীদের মনে হচ্ছে, এই ধরনের মন্তব্য ভোটের নিরপেক্ষতা ও শাসনব্যবস্থায় প্রশ্ন তুলতে পারে। আগামী নির্বাচনে এই ধরনের কৌশল রাজনৈতিক উত্তেজনা ও জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি, ভোটারদের মধ্যে বিভেদ ও সন্দেহের জন্ম দিতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সকল দলের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন, যাতে নির্বাচনী মাঠে ক্রীড়া ও প্রতিযোগিতার মতো স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা বজায় থাকে।