রফিকুল হাসান, কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের জামাতা তথা রাজ্য যুব তৃনমূলের প্রাক্তন নেতা ইয়াসির হায়দার। যুবনেতা ইয়াসির হায়দার কলেজে পড়ার সময় থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা ছাড়িয়ে হাওড়া, দুই 24 পরগনা, হুগলি নদীয়া সহ বিভিন্ন জেলায় তার সামাজিক কাজকর্মের মাধ্যমে জন পরিচিতি লাভ করেন। পুরমন্ত্রীর জামাতা হওয়ার সুবাদে যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই যুব তৃণমূল কংগ্রেসে নাম লেখান ইয়াসির হায়দার। তার ফল স্বরূপ 2015 সালে পশ্চিমবঙ্গ যুব তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান পুরমন্ত্রীর জামাতা ইয়াসির হায়দার। দলীয়ভাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর শুধু কলকাতাকেন্দ্রিক নয় কলকাতা ছাড়িয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে জনসংযোগ বৃদ্ধি করতে থাকেন ইয়াসির। বিশেষ করে ছাত্র ও যুবদেরকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে জোর প্রয়াস শুরু করেন। এক্ষেত্রে তিনি সফলতা পান হাওড়া জেলার উলুবেরিয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র এলাকায়। উলুবেরিয়া পূর্ব বিধানসভা এলাকার মানুষের সঙ্গে তিনি নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তোলেন। এমনটাই দাবি তাঁর। আর সেই সুবাদে ওই কেন্দ্রের মানুষের সেবা করার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীকে এই বিধানসভা নির্বাচনে ভোটে লড়তে চেয়েছিলেন।
বলাবাহুল্য, গত বছরে ঘটে যাওয়া আম্পানের সময় সুন্দরবন অধ্যুষিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ইয়াসির হায়দার। কিন্তু আম্ফান পরবর্তী সময়ে তাল কাটে ইয়াসির হায়দারের। কোভিড পরিস্থিতির সময় কোভিড আক্রান্ত হয়ে হসপিটালে ভর্তি ছিলেন তিনি। হসপিটালের বেডে শুয়ে তিনি দেখেন পশ্চিমবঙ্গ যুব তৃনমূলের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এই নিয়েই উষ্মা প্রকাশ করেন ইয়াসির হায়দার। তিনি বলেন কি কারনে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আমি আজও জানতে পারলাম না তার সঠিক কারণ। কারণ জানার জন্য যুব তৃনমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক ব্যানার্জিকে আমি নিজে ফোন করেছিলাম। কিন্তু আমার ফোন রিসিভ করেননি। দাবি ইয়াসীরের।আমি এসএমএস এর মাধ্যমে আমার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ জানতে চেয়েছিলাম। তার সঠিক উত্তর মেলেনি বলে ক্ষুব্ধ ইয়াসির হায়দার। তাঁর কথায় বছরের পর বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে এবং অভিষেক ব্যানার্জীর বার্তাকে শুধু কলকাতা নয় বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আর তার ফলস্বরূপ এটাই মিলল। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, যে সমস্ত কলাকুশলীরা একদিন থেকে দুদিন আগে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছেন তারা বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রতীকে লড়াই করছেন। খুব ভালো কথা। কিন্তু যারা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, তাদেরকে ব্রাত্য রেখে কেন সেই সমস্ত কলাকুশলীদের প্রার্থী করা হচ্ছে? প্রশ্ন পুরমন্ত্রীর জামাতার। আগামী দিনে এরফলে তৃণমূল কংগ্রেস অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা তাঁর। তখন কিন্তু এই সমস্ত কলাকুশলীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। তৃণমূল স্তরের একজন সাধারণ কর্মী কিন্তু তৃণমুলকেই বাঁচাতে আসবেন। সেটা কেন তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝতে পারছে না, বলে আশাহত ইয়াসির হায়দার। তার কথায় এই সমস্ত বিষয় দেখে আমার আর ভাল লাগে না। আর তাই আমি তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করেছি। আগামী দিনে একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করে যাব। তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে তিনি বিজেপি নাকি আব্বাস সিদ্দিকী সঙ্গে রাজনৈতিক প্লাটফর্মে মিলিত হবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময়ই সব বলবে। এখন কিছু বলতে পারব না।