উত্তর প্রদেশের “ভিআইপি সঙ্গম” এখন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ঐতিহ্যকে এক অভূতপূর্ব পুঁজিবাদী ব্যবসায়িক মডেলের কাছে বেচে দিচ্ছে। প্রাচীন কুম্ভ মেলা, যা হাজারো সাধারণ মানুষের আধ্যাত্মিক মিলনস্থল হিসেবে খ্যাত ছিল, তা এখন শুধু উচ্চবিত্ত, এনআরআই এবং ধনী বংশের চাহিদা মেটাতে রূপান্তরিত হয়েছে।
পূর্বে কুম্ভ মেলা ছিল ভক্তির মিলনস্থল, যেখানে সকলের জন্য সমান আধ্যাত্মিক প্রেরণা ছিল। কিন্তু আজকের এই বিলাসবহুল সংস্করণে, প্রতিটি সৎতিক সকালের নরম প্রভাতে শুধুমাত্র ধনী মানুষের জন্য এক বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ব্যক্তিগত নৌকায়, প্রিমিয়াম সুবিধার সাথে ৫০,০০০ টাকার ব্যয়বহুল এই অভিজ্ঞতা দেখায় কিভাবে পুঁজিবাদ একটি পবিত্র অনুষ্ঠানের অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক মূল্যকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করছে।
সরকারের এই উদ্যোগ কুম্ভ মেলার ঐতিহ্যগত সহাবস্থানের মর্যাদা নষ্ট করে, যেখানে আগে ধর্মীয় ভক্তির মিলনে সামাজিক সমতা ও একতা বিরাজ করত। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, ধনী এবং সাধারণের মধ্যে এই অভিজাত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি গভীর শ্রেণী বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি গত ২৯ জানুয়ারির অনেক মানুষের ভয়াবহ পদদলিত হওয়ার ঘটনার পর অনেক নিরীহ প্রাণ হারিয়েছিল। প্রশাসন একই ধাঁচ বজায় রেখে ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে এক বিলাসবহুল পণ্য বানিয়ে তুলছে।
এই ঘটনা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, পুঁজিবাদ কেবলমাত্র বাজারে আর্থিক লাভের পিছনে লিপ্ত নয়, বরং আমাদের সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকেও বাণিজ্যিক মুনাফার জন্য বিক্রয় করছে। ঐতিহ্যগত সমাজে যেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল সমতা ও মানবিক বন্ধনের উৎস, সেখানে আজকের এই পরিবর্তন প্রমাণ করে যে, অর্থের আধিপত্যে কিভাবে নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক বন্ধনকে বিনষ্ট করা যায়।
উত্তর প্রদেশের এই উদ্যোগ শুধুমাত্র একটি আধ্যাত্মিক উৎসবের রূপান্তর নয়, বরং এটি একটি সতর্কবাণী—একটি সতর্কবাণী যে পুঁজিবাদ কিভাবে সমাজের সর্বজনীন ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বাণিজ্যিকীকরণ করে ভেঙ্গে ফেলছে।