কক্সবাজারে সাগরের বর্জ্যে দেশি স্যান্ডেল, বিদেশি মদের বোতল, বিরল সাপ।

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

received_3111039758932355

 

খোরশেদ মাহমুদ
স্টাফ রিপোর্টার, এনবিটিভিনিউজ।

এক সপ্তাহ আগে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য, মাছ ধরার ছেঁড়া জাল, রশি, কাছিম, বিরল সাপ, মদের বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যের উৎস নিয়ে দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। পরিবেশবাদীসহ উত্সুক মহলের প্রশ্ন, কোত্থেকে আসতে পারে টনকে টন ভাসমান বর্জ্য? হঠাৎ করে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই কেন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভেসে এলো এত বর্জ্য? বর্জ্য ভেসে আসার কারণ জানতে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে তাদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় সামনে রেখে কাজ করছে তা হলো—হঠাৎ করে কেন এত বর্জ্য এবং একসঙ্গে এত কাছিম কিভাবে ভেসে এলো সমুদ্রসৈকতে।

জানা গেছে, তদন্তের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্র থেকে ভেসে আসা বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁরা দেখেছেন, এসব শুধু দেশীয় বর্জ্য নয়। যেসব মদের বোতল পাওয়া গেছে সেগুলো বাংলাদেশের তৈরি নয়। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মদের বোতলও পাওয়া গেছে। তবে যেসব স্যান্ডেল ভেসে এসেছে সৈকতে, সেসব বিদেশি নয়। স্যান্ডেলের মধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলের নাম পাওয়া গেছে। তার মানে হলো এসব স্যান্ডেল কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল থেকে ফেলা বর্জ্য। তদন্ত করতে গিয়ে উঠে এসেছে, শুধু দেশি বা বিদেশি বর্জ্য নয়, বরং দেশি ও বিদেশি বর্জ্যের সংমিশ্রণ ঘটেছে। প্রশ্ন হলো, কী কারণে এত বর্জ্য কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভেসে এলো? তদন্ত কমিটি মনে করে, গভীর সমুদ্রে জোয়ার বা পানির ঘূর্ণনের কারণে বর্জ্যগুলো সৈকতে ভেসে এসেছে। স্থানীয় জেলেরা সমুদ্রে পানির এমন ঘূর্ণনকে ‘কাজাইন্না’ নামে জানেন। সাধারণত গভীর সমুদ্রে যেখানে পানির গভীরতা কম থাকে সেখানে বর্জ্যগুলো জমা হয়। পরে বায়ুপ্রবাহ, স্রোত এবং সমুদ্রের গভীরতার তারতম্যের যোগসূত্রে পানিতে ঘূর্ণন তৈরি হয়। তবে এমনটা সব সময় হয় না, কালেভদ্রে এমনটা হয়ে থাকে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমরা দেখার চেষ্টা করেছি, হঠাৎ করে যে বর্জ্যগুলো ভেসে এলো এটা প্রাকৃতিক কি না। আর এত কাছিম একসঙ্গে কেন ভেসে এলো। তা ছাড়া এসব বর্জের উৎস কী।’ তিনি বলেন, ‘তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, মদের বোতলগুলো বাংলাদেশি নয়। বিদেশি। আর ছেঁড়া জাল, স্যান্ডেলসহ কিছু বর্জ্য দেখেছি, এসব বাংলাদেশের। তাই সব বর্জ্যই বিদেশি বা সব বর্জ্যই দেশি, এটা বলার সুযোগ নেই।’

গত ১১ জুলাই রাতে হঠাৎ করে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্লাস্টিক, ছেঁড়া জাল, রশিসহ নানা ধরনের বর্জ্য ও জলজ প্রাণী ভেসে এসেছে, যা কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, ১১ জুলাই শনিবার রাত থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা থেকে শুরু করে হিমছড়ি পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকার সৈকতজুড়ে ভেসে এসেছে এসব বর্জ্য। এ ছাড়া ছিল সামুদ্রিক কাছিমসহ নানা জলজ প্রাণী। সৈকতের অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এসব বর্জ্য। স্থানীয়রা একসঙ্গে এত বর্জ্য এর আগে কখনো দেখেনি। সব মিলিয়ে ৩০ টনের বেশি বর্জ্য মিলেছে বলে জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা গেছে। এসব বর্জ্যের উৎস অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসারকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সদস্যসচিব করা হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুল হুদাকে। এ ছাড়া বন বিভাগের জেলা মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিনিধিও রয়েছেন কমিটিতে। ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক।

কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রথমে মনে করেছিলেন, আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী জাহাজ থেকে এসব বর্জ্য ফেলা হয়েছে। তাঁরা মনে করেছেন, যেসব মদের বোতল পাওয়া গেছে, এসব বাংলাদেশে উৎপাদিত নয়। কিন্তু পরে সৈকতে ভেসে আসা আরো অনেক জলজ প্রাণীর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেগুলো আগে কখনো দেখা যায়নি, এমন জিনিসও ভেসে এসেছে। এখানে দেশি ও বিদেশি বর্জ্যের সংমিশ্রণ ঘটেছে।
তদন্ত কমিটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা দুই ধরনের বর্জ্য মিলেছে। একটি হলো প্লাস্টিক বর্জ্য। অন্যটি স্বাস্থ্য সরঞ্জাম বর্জ্য। প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে ড্রাম, ঝুড়ি, গ্যালন, ছেঁড়া জাল, কারেন্ট জাল, সুতা, বড় বড় বয়া, প্লাস্টিকের কনটেইনার, মদের বোতল, প্রচুর পরিমাণ স্যান্ডেল। স্বাস্থ্য সরঞ্জামের মধ্যে মিলেছে প্রচুর পরিমাণ সিরিঞ্জ। এ ছাড়া ভেসে আসা বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, গ্যাস সিলিন্ডার, খাবারের মোড়ক, প্লাস্টিকের কনটেইনার। এ ছাড়া কাছিম পাওয়া গেছে ১৬০টি। যার মধ্যে ২০টি ছিল মৃত। পাওয়া গেছে বিরল প্রজাতির সাপও। তদন্ত কমিটির প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে কথা বলেছেন স্থানীয় অভিজ্ঞ জেলেদের সঙ্গে। দুটি মৃত কাছিম চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিনিধিরা দেখেছেন, বেশির ভাগ কাছিম ক্ষতবিক্ষত। কোনো কাছিমের সব অঙ্গ ছিল না। কোনো কোনো কাছিমের গলায় ক্ষত পাওয়া গেছে। তবে ক্ষতগুলো অনেক আগের। তবে একেকটি কাছিমের ওজন দেখে তদন্ত কমিটির প্রতিনিধিরা বিস্মিত হয়েছেন। কোনো কোনো কাছিমের ওজন ৪০ থেকে ৫০ কেজির মতো। এসব কাছিমকে বিরল বলে অভিহিত করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন। তদন্ত কমিটির প্রতিনিধিরা দেখেছেন, বেশির ভাগ কাছিমের গলায় জাল পেঁচানো। তাঁরা মনে করছেন, জেলেরা গভীর সমুদ্রে যখন মাছ ধরতে গেছেন, তাঁদের জালে এসব কাছ

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর