মাদ্রাসা থেকে উঠে আসা অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কলকাতার এলিয়ট লেনের বাসিন্দা মুহাম্মদ ইসরার, যিনি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামুদ্রিক প্রত্নতত্ত্বে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
মাত্র চার বছর বয়সে পিতৃহারা ইসরারকে তাঁর বড় ভাই মুহাম্মদ ইশতিয়াক বাবার মতো করে লালন-পালন করেন। ছোটবেলায় মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করলেও, বন্ধু হাসান আবদুল গফফারের প্রভাবে আধুনিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি ইসরারের আগ্রহ জন্মায়। হাসান বর্তমানে অ্যাকসেঞ্চারে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত।
মাদ্রাসার প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ইসরার ইলাহাবাদের (বর্তমান প্রয়াগরাজ) জামিয়া আরিফিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন, যা আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত। সেখানে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও হিন্দি পড়ানো হয়। পরে তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক এবং হায়দরাবাদের মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
স্নাতকোত্তর শেষে ইসরার সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ বৃত্তি পেয়ে সামুদ্রিক প্রত্নতত্ত্বে এমএসসি করতে যান। কলা বিভাগের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞানভিত্তিক এই বিষয়টি তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং সফলভাবে সম্পন্ন করেন। ইসরার বলেন, “প্রথমদিকে বিষয়টি কঠিন লাগলেও, পরে উপভোগ করতে শুরু করি। প্রত্নতত্ত্ব ইতিহাসেরই অংশ, কিন্তু সামুদ্রিক প্রত্নতত্ত্ব এখনও ভারতে একটি ব্যতিক্রমী বিষয়।”
ইসরারের এই সাফল্যের পেছনে তাঁর মা আমনা খাতুনের অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি সবসময় ইসরারের সিদ্ধান্তগুলোতে সমর্থন দিয়ে তাঁর শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন।
ইসরারের এই যাত্রা মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীসহ সকল শিক্ষার্থীর জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, সঠিক দিকনির্দেশনা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারেন।