তাবলীগী মারকাজ বনাম কুম্ভ মেলা : বিজেপির ভন্ডামির অতীত-বর্তমান

নিউজ কর্নার : গতবছর তাবলিগি মারকাজে দেশ-বিদেশ থেকে আগত বেশকিছু তবলিগ জামাতের সদস্যদের জামায়াতের কারণে বেশ কিছু মানুষ করোনা সংক্রামিত হয়েছিল। যে কারণে সে সময় মোদি সরকার তবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র দিল্লির নিজামুদ্দিন আউলিয়া মসজিদ বন্ধ করে দেয় অনির্দিষ্টকালের জন্য। গ্রেপ্তার করা হয় বহু দেশে বিদেশে তাবলীগ জামাত সদস্যদের। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুতর ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় তবলিগ জামাতের আমীর মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে। তবলীগ জামাতের ওই মারকাজকে কেন্দ্র করে সারা ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়কে করণা সংক্রমণ এর একমাত্র কারণ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে বিজেপি সরকার। সঙ্গে গেরুয়া মিডিয়ার সৌজন্যে চালানো হয় মিডিয়া ট্রায়াল। কিন্তু বর্তমান সময়ে উত্তরাখণ্ডের হরিদ্দার এর কুম্ভ মেলায় ভারতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় দফার ঢেউ আছড়ে পড়েছে ঠিক সেই সময় লক্ষ্ লক্ষ্ মানুষ একত্রিত হয়েছেন। কুম্ভমেলার কারণে হরিদ্দার শহরে গত কয়েক দিনে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে করোনা সংক্রমনের হার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে এই কুম্ভ মেলায় লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগমের কারণে এখান থেকে অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হতে পারে এই মারণ ভাইরাসে। কিন্তু ব্যাপারটিতে হেলদোল নেই কেন্দ্রের বা উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের। উল্টে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সিং রাওয়াত মন্তব্য করেছেন, তবলিগ জামাতের মারকাজ এর সঙ্গে বর্তমানে চলমান কুম্ভ মেলার তুলনা করা যায় না। এবার দেখা যাক তুলনামূলক দৃষ্টিতে গতবছর তাবলিগি মারকাজ এর সঙ্গে এবছর কুম্ভ মেলার সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য কোথায়।

গত বছর মার্চ মাসে তাবলিগের মারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় দেশের কোথাও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কোনো রকমের করনা বিধি বা সর্তকতা জারি করেনি কেন্দ্র সরকার বা কোন রাজ্য সরকার। বরং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, করোনা এখন ভারতের জন্য হেলথ এমার্জেন্সি অর্থাৎ জরুরী কালীন স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ নয়। সে সময় দেশে সক্রিয় করোনা সংক্রামিত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০০ জন। দৈনিক সংক্রমনের সংখ্যা ছিল ২০ এর কম।

অন্যদিকে বর্তমানে যখন উত্তরাখণ্ডের কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন দেশে মোট করণা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১ লক্ষ পার হয়ে গেছে। দৈনিক নতুন সংক্রামিত রোগীর সংখ্যা দেড় লাখ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমনের দ্বিতীয় কেউ আছে পড়ায় সামাজিক দূরত্ব বিধি, মাস্ক এর মত করোনা সতর্কতা কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে পালন করা হচ্ছে সপ্তাহান্তের লকডাউন।

 

ঠিক সেইসময় হরিদ্দার এর কুম্ভ মেলায় লক্ষ লক্ষ সন্ন্যাসী ও পুণ্যার্থীর আগমনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে, বলছেন দেশের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ঠিক তার বিপরীত মত দেখা যাচ্ছে বিজেপির নেতাদের। বিজেপি নেতা এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী সিং রাওয়াত বলেছেন, ঈশ্বরের উপর পুণ্যার্থীদের অগাধ বিশ্বাস করোনা যুদ্ধে তাদের সহায়তা করবে। একই কথা মুসলিমদের তবলিগ জামাতের ক্ষেত্রে কেন প্রযোজ্য নয় সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে বিজেপির এই ভন্ডামি আর কতদিন সহ্য করবে দেশবাসী?

Latest articles

Related articles