মন্দিরের কাছে মুসলিম পরিবার কেন? ১১ পরিবারকে উৎখাত করল যোগী, ভোটের আগে শুরু বিজেপির সাম্প্রদায়িক খেলা

নিউজ ডেস্ক : মোদি সরকারের নেতৃত্বাধীন সাম্প্রদায়িক শক্তি ভারতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সংবিধানে উল্লেখিত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধারণা শুধু লিখিত স্তরেই রয়ে গিয়েছে। বাস্তবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে হাসির পাত্র করেছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী শক্তি। এবার যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার একটি মন্দিরের ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করার যুক্তি দেখিয়ে গোরক্ষনাথ মঠ ও মন্দির লাগোয়া ১১টি মুসলিম পরিবারকে বাড়ি ও সম্পত্তি খালি করার নোটিস পাঠিয়েছে। জেলা প্রশাসন চাপ সৃষ্টি করে এই পরিবারগুলোকে চুক্তিপত্রে সই করিয়েছে বলে জানিয়েছে পীড়িত পরিবারগুলো।

উল্লেখ্য, গোরক্ষনাথ মঠ ও মন্দিরের প্রধান হলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী নিজেই। প্রশাসনের বিরুদ্ধে চাপ তৈরির অভিযোগ উঠলেও এবিষয়ে ভয়ের কারণে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ বেশিরভাগ পরিবারই। তবে এবিষয়ে মুখ খুলেছেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার জাভেদ আখতার নামে এক ব্যক্তি। তার বক্তব্য, সরকারের চাপের মুখে পড়েই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছি। বাকিরাও একই কারণে সম্পত্তি ছেড়ে উঠে যেতে রাজি হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এখানে মন্দিরের নিরাপত্তা রক্ষায় নিকটস্থ দুটো থানা আছে তারপর ও এভাবে আমাদেরকে উৎখাত করা হচ্ছে কোন বৈধ কারণে?

সরকারি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ১০টি পরিবার গত ২৮ মে চুক্তিপত্রে সই করতে বাধ্য হয়। তবে বেঁকে বসেছে একটি পরিবার। যদিও এবিষয়ে গোরক্ষপুরের জেলাশাসক বীজেন্দ্র পান্ডিয়া বলেন, কাউকেই জোর করে চুক্তিপত্রে সই করানো হয়নি। চাইলেই তারা এই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। তবে চুক্তিপত্র মেনে সম্পত্তি খালি করলে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, মন্দিরের ‘নিরাপত্তা’ রক্ষায় নতুন একটি পুলিস পোস্ট তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সূত্রেই মন্দিরের উত্তর-পূর্ব দিকে সদর এলাকার ১১টি পরিবারকে বাড়ি খালি করে উঠে যাওয়ার এই নোটিস দেয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আশপাশে অমুসলিম পরিবারগুলোকে একই নোটিশ দেওয়া হয়নি। নোটিস পাওয়া ১১টি পরিবারই মুসলিম। তাই প্রশ্ন উঠছে মুসলিম পরিবারগুলো কি তাহলে কোনো ধর্মীয় স্থানের জন্য হুমকি? আর যদি সেটা কট্টর হিন্দুত্ববাদী যোগী মনেও করে সেক্ষেত্রে তারা কোন অধিকারে ভারতের বৈধ নাগরিকদের এমন একটা বৈষম্যমূলকভাবে উৎখাত করতে পারে।

কট্টর হিন্দুত্ববাদী যোগী ইতিমধ্যেই বহু ক্ষেত্রে চরম মুসলিম বিদ্বেষী ব্যক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত। তাই এমন পদক্ষেপ উত্তর প্রদেশে আজ নতুন না। কিছুদিন আগেই মিরাটে এক শতাব্দী প্রাচীন মসজিদ ভেঙে গুড়িয়ে দেয় যোগী সরকার। বিষয়টি আন্তর্জাতিক মিডিয়া তুলে ধরলেও দালাল মিডিয়ার তরফ থেকে কিছুই দেখানো হয়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, সামনে উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু এদিকে বিভিন্ন রাজ্যে লজ্জাজনক হারের পর এখন বিজেপির আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে চরম ব্যর্থ যোগী। তার দলের মধ্যেই শুরু হয়েছে অসন্তোষ। একই করোনা বিশ্বের দরবারে মোদিকে সব থেকে অযোগ্য নেতার খেতাবে ভূষিত করেছে। তাই তথাকথিত মিডিয়া পরিচালিত মোদি ম্যাজিক এবার কাজ হবে না।তাই বিজেপি তাদের চিরাচরিত ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ব্যবহার করেই ভোট ময়দানে যেতে চাইছে। তাই এমন ঘটনা অনেক হবে বলেই মনে হয় সামনের দিনগুলোতে।

Latest articles

Related articles