~হাফিজুর রহমান, আসোসিয়েট এডিটর, এনবিটিভি
দেশ ভাগের পর উপমহাদেশের দুই দেশ ভারত পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট মাচের কথা শুনলেও ক্রিকেটের খবর রাখতাম। ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট খেলাই সাসেক্স এর টাইগার পতৌদি, গ্ল্যামারগানের ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া ভারতের কোনও প্লেয়ারের নাম শুনিনি। শুনতাম পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের নাম। বাড়িতে ইলাস্ট্রেটেড উইকলি আসতো। উইকলির পাতায় দেখতাম জাহির আব্বাস, মজিদ খান, সরফরাজ নওয়াজদের।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক তরুণ উঠতি প্লেয়ারকে নিয়ে লন্ডনের প্রেস প্রায় লিখছে চোখে পড়ত।সেদিনের সেই ইমরান খান যে একদিন দুনিয়ার নামী অলরাউণ্ডার হয়ে পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন হবেন এটা কে জানত! পরে তিনিই যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন সেটা কে ভেবেছিল!
১৯৪৭ এ দেশ ভাগের পর ভারত পাকিস্তান দুটি আলাদা দেশ। প্রতিবেশী দেশ হলেও সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায়। নামে হলেও ভারতে গণতন্ত্র আছে, পাকিস্তানে নেই। পাকিস্তান নয় দেশটার নাম নাপাকিস্তান হলেই ঠিকছিল। এজন্যই বোধ হয় দুঃখ করে কাইদে আজম জিন্না বলেছিলেন এই পোকা খাওয়া পাকিস্তান আমি চাইনি। পাকিস্তানে গণতন্ত্র নামেই, পর্দার আড়ালে অন্য খেলা। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় পাকিস্তানে বারবার নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়ে আইয়ুব, ইয়াহিয়া, বা জিয়ার মত মিলিটারি ডিকটেটাররা দেশ শাসন করছে। সে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানকে পিটিয়ে মারা, জুলফিকার আলি ভুট্টোকে বিচারের প্রহসন করে পিটিয়ে মেরে লাশের গলায় দড়ি বেঁধে ফাঁসির অভিনয় গোটা দুনিয়া দেখেছে। বেনজির ভুট্টোর জনপ্রিয়তা সহ্য না করতে না পেরে তাকেও বোমায় উড়িয়ে দেওয়া পাকিস্তানের পুরোনো ট্রাডিশান। কাজেই কাল বিকেলে ইমরান খানের উপর গুলি চালানো এই ট্র্যাডিশনের অঙ্গ। ইমরানকে ইমপিচ করে সরানো মানা যায় কিন্তু অন্যায় অভিযোগ করে ছয় বছর ভোটে দাড়াতে না দেওয়া অপরাধ। বিবিসি রিপোর্ট অনুযায়ী ইমরানকে ওরই মায়ের নামে তৈরী লাহোরে শওকাত খানম হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। ডান পায়ে তিনটি গুলি লেগেছে। হাসপাতাল বুলেটিন জানাচ্ছে ক্যাপ্টেন বিপদ মুক্ত। নিন্দায় মুখর বিশ্ব।ক্রিকেট দুনিয়া । এই কাপুরুষদের ধিক্কার জানাচ্ছে উপমহাদেশের আমির থেকে আমজনতা সবাই। কলকাতার ইমরানের ফ্যান মুনমুন সেন থেকে শুরু করে মালালা ইউসুফজাই কানাডার প্রধান জাস্টিন ট্রুডো, ফরাসি প্রধান ম্যাক্রো আরও অনেকে। সবার মত আমিও ইমরানের ফ্যান। ৭৯ তে পাকিস্তান যখন ইডেনে খেলতে আসে তখন গ্র্যান্ড হোটেলে ঢোকার রাস্তায় দাড়িয়ে ইমরানকে প্রথম দেখি। অনেক পর ইমরানকে কাছ থেকে দেখি বিড়লা সভাঘরের প্রেসমিটে। চিরদিন সামনা সামনি অন টু অন ইন্টারভিউ নিয়েছি, তাই ইমরানকে প্রেস মিটের ভিড়ে প্রশ্ন করিনি, দেখেছি ফ্যান হিসেবে।
লেখা শেষ করছি আমার পরিচিত এক ইমরান ফ্যানের গল্প দিয়ে। ইমরানের অজস্র ফান্ডের ভিড়ে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম জয়িতা গাঙ্গুলি। ইমরান খানকে নিয়ে সে Just Another Fan লিখে ফেলেছে। ইমরান পেয়েছেন কিনা জানিনা কিন্তু আমি পেয়েছি সেই বই। সেদিনের কিশোরী ফ্যান এখন নামী শিক্ষিকা। সাংবাদিকদের ঘষে মেজে তেরি করেন। শেষে গোপন কথা ফাঁস করি, মধ্য চল্লিশে সেই ফ্যান এখনও বিয়ে করেননি। কারণ কি ইমরান খান!
এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই আমার, সাসপেন্স থাক না। সব প্রশ্নের উত্তর জানতে নেই।