কেন কংগ্রেস এর হার তিনটি রাজ্যে?

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

image-5

ড. শামসুল আলম

কংগ্রেস এর তরফে মূল ত্রুটি বিচ্যূতি এক নজরে: 

১. মধ্যপ্রদেশে anti incumbency-র হাওয়া তুলতে না পারাই ব্যর্থতার বড় কারণ। তার  মধ্যে আছে আদিবাসীদের ওপর সামাজিক- আর্থিক বঞ্চনা তুলে না ধরা, এমনকি আদিবাসীর মুখ্যমন্ত্রীর পুত্রের পেচ্ছাপ করার মতো নৃশংসতম অত্যাচার হাইলাইট না করা,  ব্যপম কেলেঙ্কারীকে সামনে না আনা,  মুসলিমদের ওপর বুলডোজার এবং শিক্ষায় গেরুয়াকরণ সমেত লাগাতার নারী নির্যাতনকে সামনে না আনা এবং সর্বোপরি, কমলনাথের কট্টরপন্থী হিন্দুত্ব এবং তার INDIA জোটের মিটিং করতে না দেওয়া ছাড়াও আছে সমাজবাদী পার্টির অখিলেশকে অসম্মান করা।

২. রাজস্থান এবং ছত্রিশগড়ে কং প্রশাসনের দূর্নীতির অভিযোগের দিকে সংঘ পরিবার যে আঙুল তুলতে পেরেছে ED CBI দিয়ে, তাকে খন্ডন করতে ব্যর্থ হওয়া ছাড়াও আছে রাজস্থানে  মুহুর্মুহু নারী নির্যাতন,  স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অসাধারণ আইন পাশ হলেও কার্যকরী না হওয়া গেইলটের রাজ্যে,  ছত্রিশগড় ও রাজস্থানে আদিবাসী জাতির জল জঙ্গল জমির অধিকারের কং আমলের ২০০৬ সালের বনাধিকার আইন কার্যকর না করা।

৩. INDIA জোটের শরীকদের কোন আসন না ছাড়া এবং 1:1 লড়াইয়ে বিজেপিকে মানসিকতা বর্জন করে কং একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে মরীয়া হয়ে INDIA জোটের বিরাগভাজন হওয়া যার জন্য ১২% ভোট কেটে জোটের কিছু দল কংকে বিপদে ফেললো যার জন্য পুরোপুরিভাবে দায়ী কং নেত্তৃত্ব যার ওয়ার্কিং কমিটি পর্যন্ত গঠিত হয়নি পুরোপুরি এবং ফলে গোটা নির্বাচনে রাহুল- প্রিয়াঙ্কা – খাড়গে শো ফ্যাসিস্টদের হাতে বংশীয় শাসনের অস্ত্র তুলে দিল কং।

৪. সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে INDIA জোটের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রতিষ্ঠা করতে না পারা এবং তার ফলে রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা ম্লান হয়। এর কারণ এযাবতকাল নূন্যতম কর্মসূচি পেশ করতে ব্যর্থ হওয়া। অর্থাৎ মোদী ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্রের বিকল্পের সন্ধান দিতে ব্যর্থ হয় কংগ্রেস। শুধু ৫ দফা গ্যারান্টি ঘোঘণায় যে কাজ হয়না তা প্রমাণিত হয়ে গেল মোদীর একগুচ্ছ গ্যারান্টি সামনে আসায়। এককথায়, সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট মোদী জমানার দূর্নীতি থেকে শুরু করে SC ST Minority OBC -women সহ কৃষক শ্রমিক মধ্যবিত্ত, ছাত্রযুবদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেনি কং। এমনকি CAG রিপোর্ট, মনিপুর, হরিয়ানা,  কোনটি সামনে আসে নি। কর্নাটক বিকল্প মডেলে যে অসাম্প্রদায়িক সেকুলার দিকটি আছে তাও তুলে ধরতে ভয় পেল কং পাছে মেরুকরণ বেড়ে যায়। তাই রাজনৈতিক অপরিপক্কতা রন্ধ্রে রন্ধ্র ফুটে উঠেছে।

৫. Money muscle media mafia র সাথে হিন্দু হিন্দি হিন্দুস্থান এর বিরুদ্ধতা করতে গেলে যা দরকার ছিল তা হচ্ছে মোদী জমানার নির্বাচনী বন্ড আইনের বিরুদ্ধাচারণ করা, মোদী- আদানী আতাত তুলে ধরা, গদি মিডিয়ার মিথ্যাচারের মুখোশ খোলা যা ঠিকভাবে হয়নি। সেকুলার গণতান্ত্রিক ফেডারেল ভারত চায় না, এই সংবিধান চায় না সংঘ পরিবার – এটা প্রচারে উঠে আসে নি।  তাই caste census কে একমাত্র হাইলাইট করতে গিয়ে নির্যাতিত মানুষের শত্রু যে বিজেপির সমস্ত রাজ্যগুলি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়নি। ফলে caste census প্রচার ভোতা হয়ে গিয়ে কংকে casteist পার্টি বলতে সফল হল মোদী বাহিনী। 

৫. নির্বাচন কমিশন, আদালত মুখে কুলুপ এটে বসে থাকলো যখন মোদীরা সরাসরি সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় বিভাজনের জিগির তুললো। এটা জনমতকে বিপথে চালিত করলো যার বিরুদ্ধে কং তেমন সোচ্চার হয়নি।  উপরন্তু EVM মেশিনের বিরুদ্ধে ব্যালটে ভোটের প্রচার করা যে জরুরি তা কং বোঝেনি।  EVM নষ্টের মূল – এখন  হিন্দুতবাদী কমল নাথ বলছে। এটা  অর্থহীন কারণ ইনি ভেবেছিলেন,  বাবার নামে তিলক কেটে মন্দিরে ছুটলে ভোট আসবে।  একজন গোড়া খ্রীস্টান যদি ভাবে তিনি যীশুর চেয়েও বড় খ্রীস্টান হবেন, তা যেমন  হাস্যকর ,  তেমনি মোদীর হিন্দুত্বের সাথে কমলের পাল্লা দেওয়া তেমনি হাস্যকর।কং এর সেকুলার Credentials নষ্ট করল কমলনাথ, আর রাহুল নিজে বদ্রিনাথে তিনদিন পড়ে থাকলেন মোক্ষম সময়ে যা আমার মতো রাহুল ভক্তকেও ভাবিয়ে তুলছে।

কি করণীয় ২০২৪ এ INDIA জিততে? 

1. INDIA কে জিততে প্রথম যা দরকার তা হল ৯০% ক্ষেত্রে 1:1 লড়াই। তারজন্য দরকার কং এর নমনীয়তা (Flexibility)। উত্তরপ্রদেশে, দিল্লিতে, পাঞ্জাবে, পশ্চিমবাংলায় যথাসম্ভব কম আসন নিক কং, এবং অন্যান্য জায়গায় আঞ্চলিক দলগুলি কংকে বেশি আসন ছেড়ে দিক। তাদের উচিৎ হবে কং এর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আগের মতো রক্ষা করা। আসন রফার  হিসাবের মাপকাঠি হবে পারস্পরিক শক্তি সর্বশেষ লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের নিরপেক্ষ  পরিসংখ্যান চিত্র।

২.  অভিন্ন নূন্যতম কর্মসূচি (CMP)  ঘোষণায় দেরি না করা।  দাবিভিত্তিক কর্মসূচির কাজ হবে এখুনি জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা।

৩. এই কর্মসূচি হবে আগামী INDIAর গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক সেকুলার সোশালিস্ট সরকারের কর্মসূচি। তাই ওপরের রাজনৈতিক দলগুলোর  জোটের সাথে নিচুতলার সমস্ত গণসংগঠন এবং অজস্র নাগরিক সমাজের আন্দোলনকে সংযুক্ত করতে হবে এবং আজকের হাওয়াকে ঝড়ে এবং ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত করতে হবে। সেটাই হবে জনজাগরণের গ্যারান্টি। শুধু ওপরতলার নেতাদের ডায়াসের বক্তৃতায় ফ্যাসিস্ট শাসককে অপসারণ করা অসম্ভব যদি নিচু তলায় জনজাগরণের ঢেউ না ওঠে। এটাই দেশবিদেশের অভিজ্ঞতা শিক্ষা দেয়। 

৩. কোন নিরাশাবাদ ( pessimism)  নয়,  আশাবাদের (optimism) পতাকা তুলে ধরতে হবে।  ৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বৃটিশ ভারত ছাড়েনি,  কিন্তু তার ভিত তৈরি হয়েছিল। তারপর কৃষক বিদ্রোহ,  নৌ বিদ্রোহ,  নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজের মুক্তি আন্দোলন এবং শত শত শহিদদের রক্তের বিনিময়ে ভারত স্বাধীন হয়। রাশিয়ায় ১৯০৫ এবং চীনের ১৯২৭ সালের বিপ্লব অব্যর্থ হয়েও শেষে বিপ্লব জয়ী হয়। ২০০৩ সালে এই তিন বিধানসভায় কং হেরেও ২০০৪ সালে কং নেত্তৃত্বে UAPA জোট ক্ষমতায় আসে। ২০১৮ সালে কং ঐ তিনটি জিতলেও লোকসভার ভোটে বিজেপি জেতে ২০১৯ সালে।

৪. ইতিবাচক দিক হল চারটি রাজ্যে (তেলেঙ্গানা, ম: প্র:,  রাজস্থান, ছত্রিশগড়) মোট ভোটের  শতকরা হারে কং ১.৬% হারে এগিয়ে বিজেপির চেয়ে যদিও তেলেঙ্গানা ছাড়া কোথাও জিততে পারেনি।  মনে রাখতে হবে,  রাজনীতির ময়দান থেকে মানুষের জীবনের ময়দানে ব্যর্থতাই সফলতার সিড়ি ( Failure is the pillar of success)  

৫. ২০২৪ এ শুধু বিজেপিকে হারানো শেষ কথা নয়,  আরএসএস পরিচালিত ব্রাহ্মণ্যবাদী মনুবাদী crony capitalist বেনিয়া সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট  সমাজব্যবস্থা এবং  মার্কিন- ইজরায়েলী- ইন্ডিয়ার ফ্যাসিস্ট আন্তর্জাতিক চক্রান্তকে  ভেঙে ফেলতে ভারতীয় জনগনকে লং মার্চ করতে হবে।  এটা দীর্ঘস্থায়ী লড়াই ( protracted war).  আশু প্রয়োজন  ফ্যাসিস্ট জমানার বিরুদ্ধে ব্যাপকতম ফ্রন্ট, শোষিত শ্রেণী ও নির্যাতিত  জাতিগুলো এবং  নির্যাতিত মহিলা জাতি, সংখ্যালঘু মুসলিম ও অন্যান্য  সংখ্যালঘু ও  সমস্ত নিপীড়িত ভাষাভাষী জনগনের  ফ্রন্ট।  কবির ভাষায়, miles  to go before we sleep,  miles to go before we sleep.

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর