মাধ্যমিক পরীক্ষার পূর্বে উচ্ছেদ অভিযানের ভয়াবহ প্রভাব
আজ বাদে কাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। রাজ্যের নানা স্কুলে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এই গুরুত্বপূর্ন সময়ে আলিপুরদুয়ার অঞ্চলের রেলের জমিতে হঠাৎ ও আচমকা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়ে, শতাধিক পরিবারের জীবন ও আশার ক্ষতি করে ফেলেছে।
গত শুক্রবার, রেলের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত সানিয়া রায় ও তার পরিবারের ঘরকে লক্ষ্য করে রেল কর্তৃপক্ষ কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়াই বুলডোজারের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান চালু করে। শ্যামাপ্রসাদ হাইস্কুলের এই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সানিয়া রায়ও এই ঘটনার শিকার হয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েন। একই অভিযানে প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘরও ধ্বংস হয়ে যায়, যার ফলে তারা ৫০-৬০ বছরের স্মৃতিতে বাঁধা নিজ বাড়ির আশ্রয় হারিয়ে ফেলেছে।
ঘটনার পর, স্থানীয় বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন, “৫০-৬০ বছর ধরে এখানে বসবাস করা মানুষের ঘর এক মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী গরিবদের জন্য আবাস যোজনায় সহায়তা দিয়েছেন, কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থা না করে একত্রে শতাধিক পরিবারকে বিপদে ফেলেছে।”
সানিয়ার পরিবারের জন্য তিনি ত্রিপলের ব্যবস্থা করে সাময়িক আশ্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিআরএম অমরজিৎ গৌতম জানিয়েছেন,
“রেলের জমিতে অবৈধভাবে নির্মাণ হয়েছিল বলে তা সরাতে বাধ্য ছিলাম। প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
তবে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকরী বিকল্প আশ্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এই উচ্ছেদ অভিযানের ফলে সানিয়া রায় এবং তার মতো মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা শুধু পড়াশোনার চাপের মধ্যে পড়েছেন না; বইপত্র ও অন্যান্য শিক্ষা সামগ্রী হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, তাঁরা এখন খোলা আকাশের নিচে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সময় এই বিপর্যয় শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক অবস্থার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ তুলছেন, এতদিন ধরে তাঁদের এখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং নির্বাচনের সময় পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছিল। তবে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সময়ে এই হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযান চালু করা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এ পরিস্থিতিতে সরকারের ও রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দ্রুত ও কার্যকর বিকল্প আশ্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি, যেন শতাধিক পরিবারের জীবন ও শিক্ষার স্বপ্ন ভঙ্গ না হয়ে যায়।