কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে, বিশেষত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য। পরিসংখ্যান কানাডা (Statistics Canada) -এর তথ্য অনুসারে, এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত দেশটিতে ১০ লাখেরও বেশি বৈধ শিক্ষা ভিসা জারি করা হয়েছে। আনুমানিক ৪২৭,০০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী বর্তমানে কানাডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নথিভুক্ত। ApplyBoard-এর প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি–জুন) কানাডা ৫৫,৫০০টি পোস্ট-সেকেন্ডারি স্টাডি পারমিট অনুমোদন করেছে ভারতীয়দের জন্য, যা মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ৪৯%। ২০২৩ সালের তুলনায় এই অনুপাত স্থিতিশীল (৫১%), এবং ৮৫% অনুমোদন হার নিয়ে ভিসা বাতিল হওয়া ভারতীয় আবেদনকারীদের জন্য বড় বাধা হয়ে উঠেনি।
তবে এই ইতিবাচক পরিসংখ্যানের মধ্যেই উদ্বেগজনক এক খবর উঠে এসেছে—প্রায় ২০,০০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী কানাডায় পৌঁছানোর পর তাদের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি, এবং সরকার তাদের কোনো রেকর্ড পায়নি। যদিও এই ঘটনা ভয়াবহ মনে হলেও, বাস্তবতা আরও জটিল।
TNN-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই “নিখোঁজ” শিক্ষার্থীদের অনেকেই জীবিকার তাগিদে odd job-এ (অস্থায়ী কাজ) যুক্ত হয়েছেন। কেউ প্রতারণামূলক কলেজের শিকার হয়েছেন, আবার কেউ শিক্ষার উদ্দেশ্য ছাড়াই কাজের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার করছেন। মূলত দুটি কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে:
অনেক শিক্ষার্থী কানাডায় পড়ার আগ্রহে যথাযথ গবেষণা না করেই ভুয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাম্পটনের এক ২৪ বছর বয়সী ভারতীয় শিক্ষার্থীর ঘটনা। তিনি একটি নামকরা কলেজে ভর্তি হয়েছেন মনে করে কানাডায় পৌঁছানোর পর দেখেন, ওই “কলেজ” একটি ছোট অফিস ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, “তারা বলেছিল ক্লাস পূর্ণ, অপেক্ষা করতে হবে। সপ্তাহ কেটে গেল, বুঝলাম এটি একটি প্রতারণা। ভাগ্যক্রমে, মোট ১২ লাখ টিউশন ফির মধ্যে ৪.২ লাখ টাকাই দিয়েছিলাম।” এখন তিনি একটি গ্যাস স্টেশনে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
কিছু শিক্ষার্থী ইচ্ছাকৃতভাবে কানাডার ভিসা নীতির ফাঁক গলে কাজে প্রবেশের পথ বেছে নেন। যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ার মতো কানাডায় ভিসার জন্য টিউশন ফি অগ্রিম জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে কম খরচের কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয়ে অনেকে ক্লাসে না গিয়ে কাজে মনোযোগ দেন, যাতে পরবর্তীতে স্থায়ী বসবাসের (PR) সুযোগ মেলে। গুজরাটের এক ২৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী স্বীকার করেন, “আমার এলাকা থেকে অনেকে এ পথে এসেছে। ভালো কলেজে ভর্তি হয়েও অনেকে আমার মতো কাজ করছে, কিন্তু তাদের ২৫ লাখ টাকা ঋণ।” তিনি রেস্টুরেন্ট ও ফুড ডেলিভারির কাজ করে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন।
এই সমস্যা মোকাবিলায় কানাডা নতুন নীতি প্রণয়ন করছে:
১. নতুন ভিসা নিয়ম (নভেম্বর ২০২৪ থেকে কার্যকর): শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে (DLIs) নিয়মিত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক স্ট্যাটাস যাচাই করতে হবে।
২. বছরে দুবার IRCC-কে নথিভুক্তি নিশ্চিত করার রিপোর্ট জমা দিতে হবে।নিয়ম লঙ্ঘন করলে প্রতিষ্ঠান ১ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হতে পারে।
সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবার চাপ কমানোর জন্য স্টাডি পারমিটের সংখ্যা সীমিত করা হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর আগমন ৪০% কমেছে। ২০২৫ সালে স্টাডি পারমিট বরাদ্দ ৪৩৭,০০০ (২০২৪-এর তুলনায় ১০% কম)।
কানাডায় বৈধ পথে পড়াশোনা ও কাজের সুযোগ থাকলেও, ভুয়া প্রতিষ্ঠান বা ভিসার অপব্যবহার ভবিষ্যতে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। নতুন নীতিমালায় কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তাই কলেজ নির্বাচনের আগে গভীর গবেষণা, অনুসন্ধান এবং আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।