
গত রবিবার রাত ৯টা ৫৮ মিনিটে (ভারতীয় সময়) পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলের সোয়াত ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৪.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে স্থানীয় বাসিন্দারা। জাতীয় ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এই কম্পনের উৎপত্তি হয়েছিল হিন্দুকুশ পর্বতের ১৮৫ কিলোমিটার গভীরে। যদিও প্রাণহানি বা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই, তবুও আতঙ্কিত মানুষজন ঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। গত ১২ এপ্রিলও ৫.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপে পাকিস্তান, যা দেশটিকে ভবিষ্যৎ কম্পনের জন্য উচ্চসতর্কতায় রেখেছে।
কেন এত ভূমিকম্প?
ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ ড. মহম্মদ রেহান জানান, পাকিস্তানের ভূগর্ভে রয়েছে আরব, ইউরো-এশীয় ও ভারতীয়—এই তিন টেকটোনিক প্লেটের সংঘাত। এই প্লেটগুলির চলাচলই দেশটিতে পাঁচটি আলাদা ভূমিকম্প অঞ্চল সৃষ্টি করেছে, যা ঘনঘন কম্পনের মূল কারণ। বিশেষ করে হিন্দুকুশ অঞ্চল ভূগর্ভস্থ চাপের “হটস্পট” হিসেবে পরিচিত।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে, ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্পে উত্তাল হয়ে ওঠে তুরস্কের ইস্তানবুল। মারমারা সাগরের ১০ কিলোমিটার গভীরে এই কম্পনের কেন্দ্রস্থল ছিল শহর থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য মতে, বসফরাস প্রণালীর দুই তীরজুড়ে কম্পন অনুভূত হয়, যার জেরে অফিস ও আবাসিক ভবন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন হাজারো মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তায় জমায়েত হয়ে আতঙ্কিত মানুষজন আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনায় মগ্ন।

ভূবিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, ইস্তানবুলের ভূমিকম্প শুধু শুরু মাত্র। শহরটি উত্তর আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইনের কাছাকাছি অবস্থিত, যা প্রতি ২৫০ বছরে একবার বড় ধরনের কম্পন সৃষ্টি করে। শেষ বারের ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প হয়েছিল ১৭৬৬ সালে। অর্থাৎ, সময়ের হিসাবে আবারও যে কোনো মুহূর্তে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত কয়েক মাসে বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্পের ঘটনা বেড়েছে। পাকিস্তান ও তুরস্ক ছাড়াও জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও নেপালে মাঝারি থেকে তীব্র কম্পন রেকর্ড করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূগর্ভস্থ প্লেট সক্রিয়তাকে এর পেছনে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। এমন অবস্থায়, ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলিতে অবকাঠামো মজবুত করা এবং জনসচেতনতা বাড়ানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
তথ্যসূত্র: পাকিস্তানের জাতীয় ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র , NCS, ইউএসজিএস, ও সেদেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।