পাকিস্তানের থেকে স্বাধীন হওয়ার দাবিতে বহুদিন ধরেই আন্দোলনে শামিল বালোচ বিদ্রোহীরা এবার নিজেদের “স্বাধীন রাষ্ট্র” হিসেবে ঘোষণা করলেন। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার আবহেই এই ঘোষণা সামনে এল। বিশিষ্ট বালোচ সাহিত্যিক মির ইয়ার বালোচ এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, এখন সময় এসেছে ভারতের উচিত স্বাধীন বালোচিস্তানকে স্বীকৃতি দেওয়া। তাঁর আরও দাবি, রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছেও তাঁরা এই স্বীকৃতির আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত বালোচদের দীর্ঘদিনের আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া।

এদিকে, বালোচ লিবারেশন আর্মির তরফে জানানো হয়েছে, বালোচিস্তানের প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকায় তারা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলে ধীরে ধীরে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে ইসলামাবাদ। সেই সুযোগেই একের পর এক পাক সেনা ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে বালোচ সেনারা। বুধবার বালোচিস্তানের বোলান জেলার শোরকান্ড এলাকায় রিমোট কন্ট্রোলযুক্ত আইইডি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয় পাক সেনার একটি গাড়ি। প্রাণ হারান ১২ জন সেনা আধিকারিক, যার মধ্যে ছিলেন স্পেশাল অপারেশন কমান্ডার তারিক ইমরান ও সুবেদার উমর ফারুক।
একই দিন, দুপুর ২টা ৪০ মিনিট নাগাদ কুলাগ তিগরান এলাকায় আরও একটি বিস্ফোরণ ঘটে, যেখানে বোম ডিসপোজাল স্কোয়াডের দুই আধিকারিক নিহত হন। একদিকে ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাত, অন্যদিকে বালোচ লিবারেশন আর্মির একের পর এক আক্রমণে চাপে পড়েছে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বালোচ বাহিনীর তরফে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তান আর বালোচ ভূখণ্ডের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না।

বৃহস্পতিবার এক্স-এ মির ইয়ার বালোচ বালোচ লিবারেশন আর্মির একটি ভিডিও শেয়ার করেন এবং লেখেন, “আমরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছি। এখন ভারতের উচিত দিল্লিতে স্বাধীন বালোচিস্তানের দূতাবাস স্থাপনের অনুমতি দেওয়া। একইসঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের কাছেও আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চাওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠিয়ে পাকিস্তানি সেনাকে হটানো হোক।”
মিরের দাবি, খুব শীঘ্রই গঠিত হতে চলেছে স্বাধীন বালোচিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারে থাকবে না পাকিস্তান-সমর্থিত আ-বালোচ নেতৃত্ব। নারীদের প্রতিনিধিত্ব দিয়ে তৈরি হবে এক নতুন বালোচ প্রশাসন, যেখানে গুরুত্ব পাবে নারী নেতৃত্ব। একইসঙ্গে বন্ধু রাষ্ট্রগুলিকে আহ্বান জানিয়ে স্বাধীন বালোচিস্তানের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশও হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের জন্য এক কূটনৈতিক সুযোগ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে আসা ভারত, এই মুহূর্তে বালোচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনকে কৌশলে সমর্থন জানিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ইসলামাবাদকে আরও চাপে ফেলতে পারে। একদিকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করা যাবে, অন্যদিকে মানবাধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের প্রশ্ন তুলে আন্তর্জাতিক ফোরামে বালোচদের হয়ে কণ্ঠস্বর তুলে ধরা যাবে। বিশেষ করে রাষ্ট্রসংঘে এই প্রসঙ্গকে সামনে এনে ভারত কৌশলগতভাবে পাকিস্তানকে আরও চাপে ফেলতে পারে।
সব মিলিয়ে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে বালোচিস্তান। আর এই উত্তেজনার আবহেই সময়ের অপেক্ষা—বালোচরা সত্যিই স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারবে কি না, আর ভারত এই মুহূর্তকে কিভাবে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করে তা দেখার।