নিদারুণ দারিদ্র্যের সঙ্গে প্রতিদিনের যুদ্ধে জেতার গল্প সাগর (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) ফুলবাড়ি শীতলা স্কুলের মেধাবী ছাত্র সুকদেব মাইতির। আর্থিক সংকটে বারবার স্কুল ছেড়ে কাজে যেতে বাধ্য হলেও শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় ফের লেখাপড়া চালিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সাফল্য পেয়েছে সে। সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৫% নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সুকদেব। তবে ফলাফল প্রকাশের পরেই আবার কাজের সন্ধানে বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছে কচুবেড়িয়া গ্রামের এই যুবক।
সুকদেবের বাবা শ্রীকৃষ্ণ মাইতি রিকশা চালিয়ে ও দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালান। পরিবারের আয়ে তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই চ্যালেঞ্জ। এমন পরিস্থিতিতে সুকদেবের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ছিল বিলাসিতা। মাধ্যমিকের আগে একবার প্রায় চার মাস স্কুলে আসেনি সে। বই-খাতা ছুঁয়েও দেখেনি। নদীতে মাছ ধরে পেট চলত। স্কুলের শিক্ষক দিব্যেন্দুকুমার ত্রিপাঠী ও সমীর মাঝি বারবার তার বাড়ি গিয়ে পরিবারকে বোঝান। তার বাড়িতে শিক্ষকরা গেলে সুকদেব লুকিয়ে পড়লেও শিক্ষকরা হাল ছাড়েননি। শেষমেশ স্কুলের হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে তাকে ফেরানো হয়। সাধারণ কোচিং সেন্টারে পড়ে ২০২৩ সালে মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাস করে সুকদেব।
মাধ্যমিক পাসের পর আর্থিক চাপে সুকদেব কাজের সন্ধানে কেরলে চলে যায়। এবারও শিক্ষকরা ফোনে যোগাযোগ করে, পরিবারকে বোঝানোর পর তাকে ফিরিয়ে এনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। স্কুলের পাশাপাশি বাড়িতে টিউটরের সাহায্য নিয়ে পড়াশোনা চালায় সে। ফলাফলে উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৫% নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।
শিক্ষক সমীর মাঝি বলেন, “সুকদেব আজ আমাদের লড়াইয়ের প্রতীক।” স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকদের কথায় “দারিদ্র্য যেখানে শিক্ষাকে গ্রাস করতে চায়, সেখানে একজন শিক্ষার্থীকে ধরে রাখতে হলে তাকে শুধু বই নয়, স্বপ্নও দেখাতে হয়, তাকে বুজতে হয়” স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভোলানাথ দাস যোগ করেন, “নম্বর নয়, একজন শিক্ষার্থীর সংগ্রামকে বোঝা জরুরি। সুকদেব প্রমাণ করেছে, সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধকতাও জয় করা যায়।”
সুকদেবের বাবা শ্রীকৃষ্ণ মাইতি বলেন, “দিন আনে দিন খাই। ছেলে কলেজে পড়াক, তা-ই চাই। কিন্তু টাকা নেই। সাহায্য পেলে ও পড়বে, নইলে আবার কাজে চলে যাবে।” পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সুকদেবের ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণির পরেই পড়াশোনা ছেড়েছে। বোন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
ফলাফল প্রকাশের পর সুকদেব বেঙ্গালুরুতে একটি কাজে যোগ দিয়েছে। ফোনে সে বলে, “কলেজে ভর্তি হতে চাই। বাড়ি থেকে পড়াতে পারবে না। যদি কেউ সাহায্য করে, তবে আবার পড়ব।” শিক্ষকদের আশা, সুকদেবের এই লড়াই সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।