Sunday, May 18, 2025
29.4 C
Kolkata

অন্ধকার থেকে আলোয়: মাওবাদের কালো ছায়া কাটিয়ে স্বাধীনতার পর প্রথম বিদ্যুতের আলো দেখল ছত্রিশগড়ের ১৭টি গ্রামে

দীর্ঘদিনের অবহেলা, অস্থিরতা আর মাওবাদী সন্ত্রাসের কালো অন্ধকার ভেদ করে অবশেষে ছত্রিশগড়ের অন্তর্গত ১৭টি প্রত্যন্ত গ্রামে স্বাধীনতার পর এই প্রথম বিদ্যুৎ সংযোগ প্রবেশ করল । এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক সফলতা নয়, বরং মানবিক জয়েরও প্রতীক। দীর্ঘ সাত দশক ধরে এই গ্রামগুলোর মানুষরা অন্ধকারেই কাটিয়েছেন দিনরাত—না ছিল বৈদ্যুতিক পাখা, না ছিল আলো, না ছিল আধুনিক জীবনের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা। স্বাধীনতার ৭৭ বছর পর এসে, এই প্রথম তারা বিদ্যুতের আলোয় নিজেদের ঘর দেখতে পেলেন।

ছত্রিশগড়ের দক্ষিণাঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলো দীর্ঘদিন ধরে মাওবাদী আন্দোলনের কারণে প্রশাসনিক যোগাযোগ ও উন্নয়নের বাইরে রাখা ছিল। অস্থিরতা, নিরাপত্তার অভাব, এবং রাজনৈতিক অনিচ্ছার মিশেলে এসব গ্রাম যেন ভারতের বুকেই ‘ভুলে যাওয়া ভূখণ্ড’ হয়ে উঠেছিল। অনেক সময় সরকার বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নিলেও, মাওবাদীদের হুমকি এবং নিরবচ্ছিন্ন সন্ত্রাসের ফলে সেই উদ্যোগ থেমে গেছে মাঝপথেই।

তবে সম্প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে এবং স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়। ভারতীয় বিদ্যুৎ দপ্তর ও ছত্রিশগড় রাজ্য বিদ্যুৎ বোর্ডের প্রযুক্তিগত সহায়তায় শুরু হয়েছিল ‘সৌভাগ্য যোজনা’র আওতায় গ্রামগুলিতে ট্রান্সফর্মার বসানো, বৈদ্যুতিক লাইন টানা ও মিটার সংযোগের কাজ। প্রতিকূল ভূপ্রকৃতি ও মাওবাদী হুমকি সত্ত্বেও বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা সাহসিকতার সঙ্গে এই কাজ চালিয়ে যান।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “জন্মের পর থেকে কুপি-হারিকেনেই আলো দেখেছি। আজ প্রথমবার আমার ঘরে বাল্ব জ্বলতে দেখলাম, এটা যেন স্বপ্ন।” একজন স্কুল শিক্ষকের কথায়, “ছাত্রছাত্রীরা এতদিন সন্ধ্যার পর পড়তে পারত না, এখন তারা রাতে পড়াশোনা করতে পারবে, টিভি দেখতে পারবে, মোবাইল চার্জ দিতে পারবে—এ এক নতুন যুগের সূচনা।”

এই বিদ্যুৎ সংযোগ শুধু জীবনযাত্রার মান উন্নয়নই নয়, একে কেন্দ্র করে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিও ঘটবে বলেই আশাবাদী প্রশাসন। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছানো মানেই কেবল আলো নয়, বরং তা নতুন সুযোগ, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে।

এই ঘটনা নিঃসন্দেহে ভারতের প্রান্তিক অঞ্চলে উন্নয়নের স্পষ্ট বার্তা বহন করে। মাওবাদী হুমকি, নিরাপত্তাহীনতা, এবং অজস্র প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রশাসনের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে, ইচ্ছা ও উদ্যোগ থাকলে পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়েও পৌঁছানো যায় প্রগতির আলো।

এই ১৭টি গ্রামের আলো জ্বলে ওঠা যেন এক প্রতীকী বার্তা—মাওবাদের অন্ধকার যত গভীরই হোক, রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও প্রয়াসের আলো একদিন সেই অন্ধকার কাটিয়েই আলোয় ভরিয়ে দেয় পথ।

Hot this week

রক্ত ঝরছে শিক্ষকের, তবু ফিরহাদের মুখে ব্যঙ্গের রেখা

বিকাশ ভবনের সামনে এক অনড় প্রতিবাদের দৃশ্য। চাকরি হারানো...

Topics

রক্ত ঝরছে শিক্ষকের, তবু ফিরহাদের মুখে ব্যঙ্গের রেখা

বিকাশ ভবনের সামনে এক অনড় প্রতিবাদের দৃশ্য। চাকরি হারানো...

অপারেশন সিঁদুর’ বিতর্কে সৌগত, তারা নিজের দল নেই পাশে

সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সাংসদ সৌগত রায়ের মন্তব্যে বিতর্ক...

বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে বাঙালি পর্বতারোহীর পা পড়লো

আরও একবার বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে পা রাখলেন...

Related Articles

Popular Categories