সাইফুল্লা লস্কর : প্রায় তিন দশক আগে ভাঙ্গা হয়েছিল ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ। উদ্দেশ্য ছিল মসজিদ ভেঙে সেখানে মন্দির তৈরি। তিন দশক পরে হলেও গেরুয়া বাহিনীর সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে এবং মসজিদ ভাঙ্গার পেছনে দোষী সবাই আইনের চোখে বিশেষ কারণে এবং বিশেষ প্রভাবে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। এতে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। তারপর থেকে তারা একের পর এক তাজমহল, দিল্লি জুমা মসজিদ, মথুরার ঈদগাহ মসজিদ, দিল্লির কুতুবমিনার, পশ্চিমবঙ্গের আদিনা মসজিদ সহ বহু ইসলামী স্থাপত্যের ওপর নিজেদের দাবি পেশ করছে। এখনো তেমন একটা সফলতা না পেলেও চেষ্টায় তাদের কোনো খামতি নেই। এবার সেই উগ্রবাদীদের দৃষ্টি গিয়ে পড়ল উত্তরপ্রদেশের বাঘপাত জেলার দিগম্বর জৈন কলেজের মধ্যেকার মন্দিরের ওপর।
দ্য হিন্দু পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী সেখানে আরএসএস এর ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এ বি ভি পি এর সদস্যরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে কলেজ অভ্যন্তরের মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত জৈনদের ধর্মীয় দেবী মা শ্রুতদেবির মূর্তি সরিয়ে দেওয়ার জন্য। তারা বেশ কয়েকবার বহিরাগত দুষ্কৃতীদের সাহায্যে কলেজে প্রবেশ করে মূর্তি সহ মন্দিরে ভাঙচুর করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কলেজের অন্যান্য ছাত্র ছাত্রী এবং কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তারা যদি ও সফল হয়নি এ কাজে। এবার তারা ৭ দিন সময় দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষকে মূর্তি সরাতে।
- এবিভিপি এর তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে বর্তমান জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তির স্থানে পূর্বে হিন্দুদের শিক্ষার দেবী সরস্বতীর মূর্তি বিদ্যমান ছিল। সেটা সরিয়েই নাকি এই মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে। তাই গত বছর থেকেই তাদের লক্ষ্য এই মূর্তিটি সরিয়ে সেখানে সরস্বতীর মূর্তি স্থাপন করে সেখানে হিন্দু মন্দির নির্মাণ করতে হবে। তবে কলেজের তরফ থেকে সেখানে অতীতে সরস্বতীর মূর্তি থাকার কথা সম্পূর্ণ অসত্য, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে জানানো হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ বীরেন্দ্র সিং দ্য হিন্দুকে জানিয়েছেন, কিছু বহিরাগতদের সঙ্গে মিলে এই উৎশৃঙ্খল বিপথগামী ছাত্ররা মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর করতে পারে এই আশঙ্কায় আমরা পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি। তবে এখনো পর্যন্ত কোন গ্রেপ্তারের খবর নেই।” উত্তর প্রদেশ পুলিশের তরফ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, কলেজে মধ্যে অবস্থিত ওই মন্দিরটিতে মেরামত চলার সময় এক শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে সেখানে মূর্তির রদবদল করা হয়েছে সেজন্যই এ সমস্যার উদ্ভব। পুলিশ দুই পক্ষের সঙ্গে বার বার আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হলেও এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
কলেজের যুগ্ম-সচিব ডিকে জৈন বলেছেন কিছুদিন আগে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটা বহিরাগতদের দল জোরপূর্বক মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করে মূর্তি ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। ঐতিহাসিক অমিত রায় জৈন বলেছেন, এবিভিপির দুষ্কৃতীরা মন্দিরের মধ্যে জুতো পরে প্রবেশ করে মূর্তির উপরে উঠে যায়। জৈন সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের মূর্তির এমন অবমাননা দেখে চরমভাবে আহত এবং উত্তেজিত। তবে উগ্রবাদী ছাত্রসংগঠন এবিভিপির তরফ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে ৭ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে এই সময়ের মধ্যে মন্দিরের ওই জৈন মূর্তি সরিয়ে সরস্বতী মূর্তি স্থাপন না করলে তারা নিজেরাই ওই মূর্তি ভেঙে ফেলবে। ঘটনায় ভীত-সন্ত্রস্ত এবং নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বাঘপাত জেলার জৈন সম্প্রদায়ের মানুষজন।