
ওয়াকফ (সংশোধন) বিলের বিরুদ্ধে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) তীব্র প্রতিবাদ সংগঠিত করতে চলেছে। এই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে, তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের রমজান মাসের শেষ শুক্রবার, যাকে জুমা তুল বিদা বলা হয়, জুমার নামাজের সময় ডান হাতে কালো ব্যান্ড পরার আহ্বান জানিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত এই বিলের বিরুদ্ধে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে চায়।
এআইএমপিএলবি-এর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ফজলুর রহিম মুজাদ্দিদি একটি ভিডিও বার্তায় এই আহ্বান জানিয়েছেন। এই বার্তাটি বোর্ডের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, “ওয়াকফ (সংশোধন) বিলের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলছে। এই পরিস্থিতিতে, রমজানের শেষ শুক্রবারে আপনার প্রতিবাদ জানান।” তিনি মুসলিমদের কালো ব্যান্ড পরার পাশাপাশি এটির ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতে এবং এআইএমপিএলবি-এর অনলাইন ডেস্কে পাঠাতে অনুরোধ করেছেন।
এর আগে, এআইএমপিএলবি ২০২৪ সালের ওয়াকফ (সংশোধন) বিলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল। প্রথম ধাপে তারা পাটনায় ২৬ মার্চ এবং বিজয়ওয়াড়ায় ২৯ মার্চ রাজ্য বিধানসভার সামনে বড় ধরনের ধর্ণার পরিকল্পনা করেছিল। এছাড়া, হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, মালেরকোটলা (পাঞ্জাব) এবং রাঁচিতে বড় সমাবেশ আয়োজনের কথাও জানিয়েছে তারা।

বিহারে এই বিলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ দেখা গেছে। বিধানসভা থেকে শুরু করে রাস্তায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এআইএমপিএলবি-এর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। পাটনায় একটি ‘মহা ধর্ণা’ আয়োজিত হয়েছিল, যা বিধানসভা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অনুষ্ঠিত হয়। এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল নরেন্দ্র মোদী সরকারের আনা বিলটি প্রত্যাহারের দাবি জানানো এবং মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের মতো “ধর্মনিরপেক্ষ” নেতাদের এই বিতর্কিত আইনের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্বিচার করতে আহ্বান জানানো।
বোর্ডের ৩১ সদস্যের অ্যাকশন কমিটি এই বিলের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক, আইনি এবং গণতান্ত্রিক সব পথে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বিলটিকে “বিতর্কিত, বৈষম্যমূলক এবং ক্ষতিকর” বলে আখ্যায়িত করেছে।
সংসদের যৌথ কমিটি ইতোমধ্যে ওয়াকফ (সংশোধন) বিলের উপর তার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ৬৫৫ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটি গত ৩০ জানুয়ারি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে হস্তান্তর করা হয়। কমিটি বিলে বেশ কিছু সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে, যদিও বিরোধী সদস্যরা এর সঙ্গে একমত হননি এবং ভিন্নমত পত্র জমা দিয়েছেন। ১৫-১১ ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়েছে, যেখানে বিজেপি সদস্যদের প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিরোধী দলগুলি এই পদক্ষেপকে ওয়াকফ বোর্ডগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা বলে সমালোচনা করেছে।বিলটি গত ৮ আগস্ট, ২০২৩-এ কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু লোকসভায় উত্থাপন করেছিলেন, যার পর এটি যৌথ কমিটিতে পাঠানো হয়। বর্তমানে চলমান বাজেট অধিবেশনে এটি পাসের জন্য আনা হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে, যদিও এখনও এটি তালিকাভুক্ত হয়নি।এভাবে, এআইএমপিএলবি ওয়াকফ (সংশোধন) বিলের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই জোরদার করেছে, যা তারা মনে করে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারের উপর আঘাত।