~ওয়াহেদ মির্জা
প্রথমে বাংলা তারপরে ভারতবর্ষ জুড়ে মুসলিম নারীদের হিজাব, বোরখা, স্কার্ফ ইত্যাদি পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় প’রে যেতে পারবে না, কত না কান্ডকারখানা ৷ একটি পোশাক নিয়ে বিচার কে সভ্য আর কে অসভ্য! উরফি জাবেদ কে বলা হয় আধুনিকতার প্রতীক৷ আর এদিকে খাদিজা রহমান কে নিয়ে কত কটূক্তি শোনা যায় ভদ্রলোকের তৈরি চিন্তা ও সমাজ ব্যবস্থায়৷ এদিকে রনবীর সিং উলঙ্গপনা সাহস দেখিয়ে দিল ৷ পোশাক যাইহোক শিক্ষা গ্ৰহন করতে পারবে না পোশাকের জন্য, এ এক বিচিত্র ঘটনার সাক্ষী হলাম আমরা ৷ আমাদের প্রজন্ম৷ সরকার যখন সরকারি প্রকল্পগুলো মুসলিমদের জন্য প্রচার করে তখন টুপি, বোরখা, হিজাব পরিয়ে পরিচয় তৈরি করতে সাহায্য করে এরা মুসলিম ৷ সামাজিক সংগঠন থেকে রাজনৈতিক দল যখন প্রচারের জন্য টুপি, বোরখা পরিয়ে সম্প্রীতি তৈরির চিত্র প্রদর্শন করে তখন মনে হয় সত্যি এরা সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছে৷ কলকাতায় ইম বাইপাস -এ পাটুলি মোড়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে সম্প্রীতি বার্তা দিতে চেয়েছেন সেখানে একজন মুসলিম মানে দাঁড়ি, টুপি, লুঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ হিন্দুরা কি লুঙ্গি পরে না বা মুসলিমরা ধুতি পরে না এই ভদ্রলোকেরা সুক্ষভাবে বিভাজন করে চলেছে এটা কে আমরা খালি চোখে সম্প্রীতি ও বিকাশ বলছি ৷
আমার কথা হচ্ছে সরকার যখন সম্প্রীতি প্রচারের সময় একটি আইডেন্টিটি তৈরি করে দিচ্ছে তখন কেন সরকারি অফিস, স্কুল, কলেজ সব জায়গায় কেন সে তার আইডেন্টিটি বহন করতে পারবে না ৷ আনন্দবাজার পত্রিকায় আমরা দেখেছি ভোটের সময় খুঁজে খুঁজে বোরখা দেওয়া ছবি পোস্ট করে, ছবি দিয়ে এরা কি বোঝাতে চায়? কোথাও খ্রিস্টান নানদের ভোটের সময় ভেইল পরা ছবি দেখা যায় না কেন? বা অর্ধ নগ্নতা পরা মহিলাদের ছবি দেখা যায় না কেন? আসল উদ্দেশ্য সমাজের মধ্যে সাইকোলজিক্যাল ভাবে একটি চিত্র তৈরি করা মুসলিম মানে এই রকম৷ এই ভদ্রলোকেরা নিজের সন্তান কে বংশপরম্পরায় একই চিত্র তৈরি করে চলেছে ৷ এই ভদ্রলোকেরা ইউরোপীয়ান সংস্কৃতি কে গ্ৰহন করে বলছে এটাই বাঙালি পোশাক ৷ সংস্কৃতির আগে ঐতিহ্য তৈরি হয় ৷ বাংলায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নিয়ম রীতি এক সময় বাঙালির সংস্কৃতি তালিকায় এসেছে ৷ কোনটা বাঙালি কোনটা অবাঙালি খোঁজ করা আর মান্যতা দেওয়া বুঝি এই কলকাতার ভদ্রলোকেরা করবে ব্রাম্মনবাদী মস্তিষ্ক দিয়ে ৷ টুপি ও পৈতে কবে কে আগে বাঙালি তকমা পেয়েছে! হট প্যান্ট আর বোরখা কোনটা আগে বাঙালির তালিকায় আসবে? যাই হোক সংস্কৃতির ধারক বারক কারা? 3% ব্রাহ্মণ বাঙালি না 70% নেড়ে, স্লেচ্ছ ,যবন বাঙালি৷ লড়াই আমাদের দোর গোড়ায় পৌঁছে গেছে ৷ আমাদের অস্তিত্ব আমাদের রক্ষা করতে হবে ৷ গতকাল বঙ্গভূষণ, বঙ্গবিভূষণ দেওয়া হল। কোন বাঙালি নেড়ে, স্লেচ্ছ, যবন ও নিম্মবর্ণীয় তো নেই সে রকম ৷ কেন শান্তির জন্য আসানসোলের ইমাম রশিদি সাহেব কে দেওয়া যেত না৷ আল আমিন মিশনের নুরুল ইসলাম সাহেব কে দেওয়া যেতো না৷ আজকে আনন্দবাজার পত্রিকা বোরখা, হিজাব পরা ছবি দিয়ে “প্রশ্ন কেন দাগ কাটে? একটি প্রজেক্ট করতে চলেছে ৷ তাহলে প্রথম সারির প্রিন্ট মিডিয়া, মিডিয়া, সরকারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, মুভি ইত্যাদিতে যদি বাঙালি মুসলমান কে একটি আইডেন্টিটি মুড়ে দেওয়া হয় তখন বাসে, ট্রামে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, এই আইডেন্টিটি বহন করলে আড়চোখে তাকান কেন? বা রব ওঠে কেন পুরো বাংলা আরব হয়ে গেল! ভারতবর্ষের ইতিহাসে আরবরা কোনো দিন সাম্রাজ্য কায়েম বা বিস্তার করেনি তাহলে আরবের কথা আসে কেন? সবই সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক আধিপত্যবাদ বা সাম্রাজ্যবাদ টিকিয়ে রাখার মন্ত্র ও কৌশল ৷ নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা আরেক সাম্প্রদায়িকতা ৷
(মতামত লেখকের নিজস্ব। লেখকের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন।)