
রাজনীতির কোন রং হয় না, হয় অঙ্ক। রাজনীতির অঙ্কটা মূলত দু ধরনের; এক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার, দুই বিরোধীদের ক্ষমতা কায়েম করার। এর বাইরে যা ঘটে তা সবটাই ঘটনার ক্রিয়া ও পার্শ্বপ্রতিয়া। বর্তমানে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের পাখির চোখ, আসন্ন ২৬ বিধানসভা নির্বাচন। বাঙলা দখলে মরিয়া প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রী। বঙ্গীয় রাজনীতিতে ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে বাকি যা ঘটছে সবটাই স্বনামধন্য বিজ্ঞানী নিউটনের থার্ড‘ল কে অবলম্বন করে। ২৬ এর ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে যা ঘটলো তা কেবলই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের আস্ফালন।
সোমবার অর্থাৎ আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুরফুরা শরীফের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। এ নিয়ে বিরোধী দলগুলি কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। তাদের বক্তব্য, সংখ্যালঘু ভোটকে কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে ফুরফুরায় যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিমায় শাসক দল এই অভিযোগকে নস্যাৎ করেছে। অপরদিকে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা দাবি তুলেছেন, দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরের পাশাপাশি মসজিদ বানানো প্রয়োজন।

অপরদিকে বঙ্গীয় রাজনীতিতে কুরুচিকর মন্তব্যকে ঘিরে সোচ্চার হয়েছে সিপিআইএম। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা এবং বর্তমান বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও তৃণমূলের বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের মন্তব্যকে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যমূলক বলে চিহ্নিত করেছেন সিপিআইএম নেতা সায়ন ব্যানার্জি। এই ঘটনার জেরে সোনারপুর থানায়, শুভেন্দু অধিকারী এবং হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এনবিটিভি- কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন- “রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবি যেভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। গতকাল রাতে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোনারপুর থানা ডেকে পাঠায়। আমরা বলেছি আমাদের কাছে যা তথ্য প্রমান আছে তা আমরা দেব। কিন্তু তার জন্য আমাদেরকে নোটিশ করে ডাকতে হবে।” পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি জানান, “পুলিশ আশ্বস্ত করলেও, এফআইআর জমা দেওয়ার পর বেশ কয়েক ঘন্টা কেটে গেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন অব্দি পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।” সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ঘৃণার ভাষণ যে বা যারা দেবে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করতে পারে। কিন্তু এখনো অব্দি কেন ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা চোখে পড়ছে এ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন যেকোনো রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রীদের, সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা থাকে। এই এধরনের কুরুচিকর মন্তব্যে দাঙ্গার পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সিপিআইএম নেতা সায়ন ব্যানার্জি। তিনিও বলেন, “আমাদের রাজ্যে আরএসএস দুভাবে পরিচালিত হচ্ছে, একটি বিজেপির মাধ্যমে, অন্যটি তৃণমূলের মাধ্যমে। রাজ্যের শাসক যখন দুর্নীতি, আরজিকর, এমন কি তৃণমূলের পার্টি অফিসে মহিলাকে ডেকে এনে ধর্ষণ এই সমস্ত ব্যাপারে প্রথমের সারিতে ঠিক সেই সময় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিন্দু মুসলমানের রাজনীতি করে আদতে মমতা ব্যানার্জির সুবিধা করে দিচ্ছে।”

অপরদিকে বিজেপির নেতা দিলীপ ঘোষ ঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “সিপিএম যখন ক্ষমতায় ছিল তখন থেকেই হুমকি এবং দাঙ্গার রাজনীতি হয়ে চলেছে। আপনাদের (সিপিএমের) দম থাকলে গণ-আন্দোলন করুন এর বিরুদ্ধে। এইসব নাটকবাজী করে রাজনীতিকে প্রভাবিত করা যাবে না।”
২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে যখন সাম্প্রদায়িক মেরুকরণটাই রাজনৈতিক দলগুলির একাংশের প্রধান অস্ত্র তখন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার দাবিতে বাংলার আমজনতা কোন দলকে বেছে নিতে প্রস্তুত? এর উত্তর রয়েছে কেবল সময়ের কাছে |