অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি সম্প্রতি পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলা ও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রসঙ্গে স্পষ্ট অবস্থান জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানালেও পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশের সামরিক পদক্ষেপ (অপারেশন সিঁদুর) সমর্থন করেছেন।

ওয়াইসি বলেন, ওয়াকফ আইন সংবিধানবিরোধী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারের পরিপন্থী বলে তারা মনে করেন। তবে এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্যদিকে, পাকিস্তান-প্ররোচিত পাহালগাম হামলাকে তিনি “ভারতের ওপর সরাসরি আক্রমণ” আখ্যা দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জাতি আক্রান্ত হলে রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
ওয়াইসি ভারতীয় সেনাবাহিনীর লক্ষ্যবস্তু নির্বাচনের প্রশংসা করেন, যেখানে সন্ত্রাসী ট্রেনিং ক্যাম্প ধ্বংস করা হয়েছে কিন্তু পাকিস্তানি সেনা বা অসামরিক স্থাপনা-বিল্ডিং এড়ানো হয়েছে। তিনি ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর গ্রে লিস্টে পাকিস্তানকে ফেরানোর পাশাপাশি ট্রেসার্ড রেজিস্ট্যান্স ফোর্স (টিআরএফ)-এর উপর বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা দাবি করেন। এছাড়া, চেনাব ও ঝিলাম নদীতে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পাকিস্তানের জলসরবরাহ নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন তিনি।

ওয়াইসি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের কর্মকাণ্ডের দায় কাশ্মীরি মুসলিমদের ওপর চাপানো উচিত নয়। পাহালগাম হামলার নিন্দায় কাশ্মীরে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে কাশ্মীরিদের সঙ্গে সংহতি দেখাতে হবে।” পুঞ্ছ হামলায় নিহতদের পরিবারকে সন্ত্রাসী হামলার শিকারের সমান ক্ষতিপূরণ ও সহায়তারও আহ্বান জানান তিনি।
তুরস্কের কুর্দি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের উদাহরণ দিয়ে ওয়াইসি বলেন, “সন্ত্রাসবাদ যেকোনো ধর্মেরই হোক, তা নিন্দনীয়।” ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা পাকিস্তানের চেয়েও বেশি উল্লেখ করে তিনি তুরস্কসহ মুসলিম দেশগুলিকে ভারতের অবস্থান বোঝানোর তাগিদ দেন।
সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করলেও ওয়াইসি পাকিস্তানের প্রতি অনাস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা ভারতকে দুর্বল করতে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।” বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে কথোপকথনের সম্ভাবনাকে তিনি অবাস্তব বলে মন্তব্য করেন।

সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি সরকারকে দেশজুড়ে সৃষ্ট জাতীয় জোয়ারকে একতার সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। পাহালগাম হামলায় স্বামীকে হারানো হিমাংশি নরওয়ালের উদাহরণ টেনে তিনি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ না ছড়ানোর আবেদন জানান। এছাড়া, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান সংক্রান্ত তথ্য উর্দু ভাষায় প্রচারের মাধ্যমে ব্যাপক জনসংযোগ করারও সুপারিশ করেন তিনি।
ওয়াইসির বক্তব্যে বারবার ফিরে এসেছে “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ” ও “ভারতের ঐক্য রক্ষা”-র ডাক। তার মতে, অভ্যন্তরীণ আইনগত বিতর্ক ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুকে পৃথক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত।