পাকিস্তানের দখলে থাকা বালুচিস্তান প্রদেশের দীর্ঘদিনের স্বাধীনতা সংগ্রাম এক নতুন মোড় নিয়েছে। বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) পাকিস্তান থেকে এই প্রদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। তাদের দাবি, পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজধানী কোয়েটা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত করা হয়েছে এবং শহরটি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বালোচ বিদ্রোহীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে, যা তারা কাজে লাগিয়ে এই সাফল্য অর্জন করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বিএলএ জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার একটি সামরিক কনভয়ে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণের ঘটনায় ১২ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া, শুক্রবার কাটগান শহরে আরেকটি হামলায় পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। বিএলএ মুখপাত্র জয়নাদ বালোচের দাবি, এই হামলায় বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হয়েছে। এই অভিযানগুলোর মাধ্যমে পাক বাহিনীর শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়েছে বলে বিএলএ জানিয়েছে।

কোয়েটায় পাকিস্তানি কর্তৃত্বের চিহ্নগুলো একে একে মুছে ফেলা হয়েছে। সরকারি ভবন থেকে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নামিয়ে তার জায়গায় বালুচিস্তানের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বিএলএর নির্দেশে, শহরে কর্মরত অ-বালোচ ব্যক্তিদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে তারা একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ বলে মনে করছে।
বালোচ নেতারা আন্তর্জাতিক স্তরে সমস্ত দেশগুলির কাছে তাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি চেয়েছেন। বিএলএর অন্যতম নেতা, কবি ও সমাজকর্মী মীর ইয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শেষ। আমরা চাই বিশ্ব আমাদের একটি নতুন দেশ হিসেবে গ্রহণ করুক।” তিনি ভারত ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে সমর্থন চেয়েছেন এবং এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এছাড়া, বিভিন্ন দেশকে বালুচিস্তানে দূতাবাস স্থাপনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মীর ইয়ার আরও জানিয়েছেন, শিগগিরই একটি নতুন সরকার গঠন করা হবে, যেখানে বালোচ নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হবে।

এই স্বাধীনতা আন্দোলনে বালোচ মহিলা ব্রিগেডের অবদান উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে মাহরাং বালোচ, যিনি বালোচ ইয়াকজেহতি কমিটির (বিওয়াইসি) নেত্রী এবং পেশায় চিকিৎসক, এই সংগ্রামে একটি প্রধান কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অত্যাচার, অপহরণ ও গুমের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে নেমেছেন। মাহরাং এবং তার সঙ্গীরা নিজেদের জন্মভূমির অধিকার রক্ষায় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন। তাদের এই সংগ্রাম এখন স্বাধীনতার আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে।

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বালুচিস্তান একটি সম্পদে ভরপুর প্রদেশ। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে জোরপূর্বক সংযুক্তির পর থেকে এখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলে আসছে। বালোচ জাতীয়তাবাদীরা দাবি করেন, তাদের অঞ্চলটি অর্থনৈতিকভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার এবং পাকিস্তানি শাসনের অধীনে নানা দমন-নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছে। বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ তাদের এই দীর্ঘ লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বালুচিস্তানের এই ঘোষণা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলি এই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। বালোচ নেতারা আশাবাদী যে, তাদের স্বাধীনতার দাবি বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি পাবে এবং দীর্ঘদিনের এই আন্দোলন একটি সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে।