মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গা 2 নম্বর ব্লকের মিল্কি গ্রামের শেখ আফসার হোসেন ওয়াকফ এস্টেট মিল্কি মসজিদ যার ই সি নম্বর 1207 এর জমি সংক্রান্ত বিবাদ দীর্ঘদিনের। বিবাদ পুরাতন এবং বর্তমান মুতয়াল্লী এবং পুরাতন মুতয়াল্লীর মধ্যে। মামলা গড়ায় ল্যান্ড রিফর্মস এন্ড টেন্যান্সী ট্রাইবুনাল পর্যন্ত। গতকাল 14 সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারপতি ডক্টর সৌম্য সরকার এবং দিবাকার মুখার্জি রায় দিয়েছেন মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্ত জমি 36 বিঘা শেখ আফসার হোসেন ওয়াকফ স্টেট মিল্কি মসজিদ এর পক্ষে সম্পাদক এই মর্মে রেকর্ড করে দিতে হবে।
মামলা চলছিল কলকাতায় এলআরটিটির সর্বোচ্চ আদালতের তৃতীয় বেঞ্চে। মামলার নম্বর 16 22/2020। বাদিপক্ষে ছিলেন বর্তমান কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন মল্লিক এবং বিবাদী পক্ষের ছিলেন পুরাতন কমিটির পক্ষে বাগবুল মঞ্জু, কবির মঞ্জু ও ইকবাল মঞ্জু । বিবাদ ছিল আফসার হোসেন মিল্কি মসজিদ এর পুরাতন কমিটি বিভিন্ন মৌজার বিভিন্ন খতিয়ান ও দাগের 36 বিঘা জমি নিজেদের নামে করে নেয় এবং অন্যদের কাছে বিক্রি করে দেয়। মোট জমি ৪০ বিঘা। ৪ বিঘা মসজিদের নামে আছে এবং ব্যবহার হচ্ছে। ফলে বর্তমান কমিটি যখন সেই ৩৬ বিঘা সম্পত্তি আফসার হোসেন মিল্কি মসজিদ এর নামে রেকর্ড করাতে যান তখন সমস্যা হয়। প্রথমে ওয়াকফ বোর্ড মুর্শিদাবাদ জেলার ডিএলআরওকে সেখ আফসার হোসেন ওয়াকফ এস্টেট মিল্কি মসজিদ এর নামে রেকর্ড করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও ডিএলআরও তা করেননি। নানা রকম টালবাহানা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে জেলাবাসীর দুর্নীতির বহু অভিযোগ আছে। অনেক ঘোরাঘুরির পরে শেষ পর্যন্ত বর্তমান কমিটি এলআরটিটিতে যান এবং সেখানে আদালত ওয়াকফ স্টেট এর পক্ষে রায় দেয়।
এই রায় নিয়ে বিশিষ্ট সমাজসেবী তায়েদুল ইসলাম বলেন, “এই রাজ্যে ওয়াকফ নিয়ে প্রতিটি সরকার দুনীতি করেছে এবং প্রতিটি সরকারকে এই দুর্নীতি করতে সাহায্য করেছে সংখ্যালঘু সমাজের নেতারা। এই রায় যারা দুর্নীতি করেছে এবং সেই কাজে সাহায্য করছে তাদের উপরে বড় আঘাত। এই রায়ের ফলে জবরদখল, বেদখল হয়ে যাওয়া লক্ষ লক্ষ একর ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধার নিয়ে যে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা যে ব্যক্তিরা চেষ্টা চালাচ্ছেন, এই রায় তাদেরকে উদ্ধারের লড়াই চালিয়ে তাদের সাহস যোগাবে, শক্তি যোগাবে। এই রায় ওয়াকফ দুর্নীতি রোধে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
এই রায় নিয়ে বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইমতয়াজ আহমেদ মোল্লা বলেন, “মুর্শিদাবাদের মিল্কি মসজিদের ওয়াকফ স্টেটের সম্পত্তির উদ্ধারের লড়াই খুবই বেদনাদায়ক। আমি কয়েক বছর আগে একসময় বর্তমান কমিটি মুতাওল্লির লড়াইয়ে সঙ্গি ছিলাম। ১০৯ বিঘা সম্পত্তির মধ্যে ৩৬ বিঘা দখলকৃত জমি মসজিদকে ফিরত দেবার যে রায় তা সত্যি আনন্দদায়ক। যারা এই লড়াইয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বা আছেন তাদের সকলকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন। তবে লড়াই এখানেই শেষ না কিন্তু। এর আগেও ওয়াকফ নিয়ে অনেক রায় আদালত দিয়েছে, কিন্তু প্রশাসন বা সরকার জমির দখল পেতে কোনো সহযোগিতা করেনি। তাই আনন্দের সঙ্গে চিন্তা সমান ভাবে রয়ে গেল। আশা রাখি এর শেষ দেখে যেতে পারবো।”
এই রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইণ্ডিয়ার রাজ্য সভাপতি ডঃ মিনারুল শেখ বলেন, “ওয়াকফ সম্পদ জন কল্যানের জন্য দেওয়া হয়েছে। জনকল্যাণের জন্য ব্যবহার করতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার হতে দেওয়া যাবে না। এই সম্পদ চোর মহা চোর। তাকে শাস্তি দিতে হবে। পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া একটি সামাজিক সংগঠন হিসাবে ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধার ও বাঁচানোর ক্ষেত্রে সামনে আছে এবং থাকবে যেমন মিল্কি মসজিদের সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য পদে পদে সাথে থেকেছে।” তিনি আরোও জানান, “দেশের যেখানেই ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এবং আইনী লড়াই চলছে সেখানে আমাদের সংগঠন দুর্নীতি রোধে কাজ করছে এবং যারা আইনী লড়াই লড়ছে তাদের পাশে আমরা থাকার চেষ্টা করি।”