পাঠকের কলমে : ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক দল বিজেপির শীর্ষ সংগঠন আরএসএস তৈরি হয়েছিল জার্মানির নাৎসি বাহিনীর আদলে, তাদের মতাদর্শ অনুসরণ করে। তাদের প্রথম যুগের প্রাণপুরুষ দের অনেকের মুখে শোনা যেত, হিটলার যেভাবে জার্মানিতে ইহুদি হত্যা করেছে ভারতের মুসলিমদের ও সেইভাবে হত্যা করা উচিত। এই আদর্শে পরিচালিত আরএসএস এবং বিজেপি বর্তমান ভারতে রাজনৈতিক ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিকারী। তাই তারা সুযোগ পেলে যে মুসলিমদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে তা তাদের আদর্শ এবং বর্তমান সময়ে তাদের বৈষম্যমূলক মুসলিম বিদ্বেষী কর্মকান্ড দেখলেই বোঝা যায়। ভারতে মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলোর মধ্যে কাশ্মীর এবং লাক্ষাদ্বীপ প্রধান। যদিও আরব সাগরের বুকে অবস্থিত দ্বীপটিতে জনসংখ্যা কম কিন্তু সেখানে জনসংখ্যার প্রায় সবাই মুসলিম যা কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী বিজেপির নীতিনির্ধারকদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তারা কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন শেষ করার পর এবার নজর দিয়েছে লাক্ষাদ্বীপের মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠতা শেষ করার দিকে। দ্বীপটিতে প্রথমে মুসলিমদের সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে শেষ করতে সেখানে মুসলিম বিদ্বেষী প্রশাসক নিয়োগ করে বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আইন তৈরির পাঁয়তারা করছে। আবার সেখানে জৈব অস্ত্র প্রয়োগ করে মুসলিম জনসংখ্যা হ্রাস করার জঘন্য প্রয়াস চালাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে দ্বীপটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিজেপির এই ঘৃণ্য চক্রান্ত ফাঁস করে দেওয়ায় মুসলিমপ্রধান লাক্ষাদ্বীপের চলচ্চিত্র পরিচালক আয়েশা সুলতানার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের করেছে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর ও অভিযোগ এনেছে গেরুয়া উগ্রবাদীরা। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের গেরুয়া শিবিরের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঠিক কী অভিযোগ আয়েশা সুলতানার বিরুদ্ধে? সম্প্রতি মালয়ালম টিভি চ্যানেল ‘মিডিয়াওয়ান টিভি’-তে এক বিতর্কসভায় তিনি দাবি করেন, লাক্ষাদ্বীপের মানুষের উপরে করোনা ভাইরাসকে ‘জৈব অস্ত্র’ হিসেবে প্রয়োগ করছে মোদি সরকার! বিতর্কের সূত্রপাত এই মন্তব্য থেকেই।
ওই অনুষ্ঠানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বিজেপি নেতারা বলছেন, কেন্দ্র দ্বীপবাসীর খেয়াল রাখতে চায়। এটাই কি সেই খেয়ালের নমুনা, যেখানে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা শূন্য থেকে দৈনিক একশোয় পৌঁছে গেল? এটাকে ওরা জৈব অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করছে। এটা আমি একেবারে হলফ করে বলতে পারি। করোনাশূন্য একটা জায়গায় কেন্দ্র যে এই জৈব অস্ত্র প্রয়োগ করেছে তা পরিষ্কার।’’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতা বিজি বিষ্ণু। তিনিও আয়েশার বক্তব্যের বিরোধিতা করে জানিয়ে দেন, ‘এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এবং এর থেকে দেশের মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে।’
কিন্তু আয়েশা নিজের বক্তব্যে অটল থেকে পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেন চীনের। দাবি করেন, যেভাবে চীন সারা বিশ্বের উপরে এই অস্ত্র প্রয়োগ করেছে, সেই একই কাজ প্রশাসন লাক্ষাদ্বীপের উপরে করছে।
স্বাভাবিকভাবেই বুধবার রাতে ওই অনুষ্ঠানের সম্প্রচার হওয়ার পরই বিক্ষুব্ধ হন বিজেপি নেতারা। লাক্ষাদ্বীপের গেরুয়া দালাল বিজেপি সভাপতি আবদুল কাদেরের অভিযোগ, ‘আয়েশা সুলতানা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে করোনা ছড়ানো নিয়ে ভুয়ো থবর ছড়াচ্ছেন।’
আরব সাগরের বুকে লাক্ষাদ্বীপের দায়িত্ব হাতে নিয়েই প্রফুল খোডা প্যাটেল এমন কয়েকটি বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার বিরুদ্ধে ওই দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা এখন ক্ষোভে ফুঁসছেন। যাতে পার্শ্ববর্তী কেরালার বহু তারকা ও রাজনীতিবিদরাও সমর্থন জানাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, নতুন প্রশাসক হিসেবে প্রফুল প্যাটেল প্রস্তাব করেছেন লাক্ষাদ্বীপে গরুর গোশত বা বিফ খাওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্বীপে এমন একটি আইন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে যাতে দ্বীপের প্রশাসক যে কাউকে এক বছর পর্যন্ত বিনা বিচারে আটকে রাখার ক্ষমতা পাবেন। সাধারণভাবে এই আইনটি ভারতে ‘গুন্ডা আইন’ নামেই পরিচিত।
সম্প্রতি নিজের যুক্তির সপক্ষে আয়েশা ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি টিভি চ্যানেলের ডিবেটে বায়ো ওয়েপন কথাটা ব্যবহার করেছি। আমি মনে করি, প্যাটেল বা তার পুলিশ লাক্ষাদ্বীপের মানুষদের জন্য বায়ো ওয়েপন। তার ও তার পারিপার্শ্বিক মানুষগুলোর জন্যই লাক্ষাদ্বীপে করোনা ছড়িয়েছে। আর আমি কিন্তু প্যাটেলকে বায়োওয়েপন বলেছি, দেশ বা দেশের সরকারকে নয়!’