অন্ধ, হেপাটাইটিস আক্রান্ত ছেলেদের অভাবনীয় রেজাল্ট, রঙিন স্বপ্ন দেখছেন আসানসোলের ঘুগনি বিক্রেতা

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20200722-WA0016

এনবিটিভি নিউজ ডেস্ক, ২২ জুলাই, পশ্চিম বর্ধমান, আসানসোল: ছোটো ছেলে জন্ম থেকে দৃষ্টিশক্তিহীন । বড় ছেলের হেপাটাইটিস বি । চিকিৎসকরা বলেছেন, দ্রুত লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে । কিন্তু, টাকা কই ! বাণেশ্বরবাবুর যে রোজগার বলতে তেমন কিছুই নেই । বাণেশ্বর গড়াই এর একটি ঠেলাগাড়ি আছে । সেটি নিয়েই আসানসোলের হিরাপুর মানিক চাঁদ গার্লস স্কুলের সামনে বসতেন আলুকাবলি আর ঘুগনি নিয়ে । দিনে দু’শো-আড়াইশো, যা উঠত, তাই দিয়েই সংসার চলত । মাসে হিসেব করলে হাজার সাতেক টাকা আয় । বাড়িতে স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়ে । স্ত্রী ঘরের কাজ সামলান । বছর একুশের মেয়েটা এখনও কলেজের গণ্ডি পেরোয়নি । কিন্তু এখন লকডাউনে বন্ধ স্কুল । বিক্রি বাট্টাও বন্ধ । অসহায় । এত বড় সংসার । খাওয়াবেন কী ! ছেলের চিকিৎসার টাকাই বা তুলবেন কীভাবে ! তাই নিয়ে চিন্তার শেষ নেই বাণেশ্বরবাবুর ।

কিন্তু, এর মধ্যেও নতুন করে আলোর দিশা দেখছেন তিনি । কিছুদিন আগেই ছোটো ছেলে অভিজিতের মাধ্যমিকের রেজ়াল্ট বেরিয়েছে । স্টার পেয়েছে । জুডোতে স্টেট এবং ন্যাশনাল লেভেল মিটে সোনা জিতেছে । আর এতেই যেন বছরের পর বছর ধরে এত সংগ্রাম, এত কষ্ট কিছুটা হলেও স্বার্থক হয়েছে বাণেশ্বর গড়াইয়ের । শুরুতে আসানসোলের ব্রেইল একাডেমি থেকেই পড়াশোনা । পরে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড বয়েজ় অ্যাকাডেমিতে ভরতি হয়েছিল অভিজিৎ । সেখান থেকেই এবছর মাধ্যমিক দিল সে । সদ্য রেজ়াল্ট বেরিয়েছে । আর এতে বাবার কষ্ট কিছুটা হলেও যেন স্বার্থক করতে পেরেছে সে । স্টার পেয়েছে মাধ্যমিকে । 632 নম্বর । প্রতিটি বিষয়ে লেটার নম্বর ।

শুধুমাত্র পড়াশোনাতেই নয় । পড়াশোনার বাইরেও বিভিন্ন জগতে সমান আনাগোনা অভিজিতের । জুডোতে স্টেট এবং ন্যাশনাল লেভেল মিটে সোনা জিতেছে । সেতারটাও ভালোই বাজাতে জানে । শুনলে একটা আলাদা টান অনুভব হয় যেন । স্কুলেই শিখেছে সেতার বাজানো । সেখান থেকেই সেতারের প্রতি ভালোবাসা । তারপর থেকে দিল্লি, মুম্বই-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পড়েছে তার । ছোটো থেকেই নিজের সঙ্গে লড়তে লড়তে অভিজিত আজ জীবনের প্রথম বড় সাফল্য পেয়েছে । কিন্তু এরমধ্যেও মনের ভিতরে রয়েছে একটা অজানা ভয়ের হাতছানি । আগামী দিনে দারিদ্রের সঙ্গে এই অসম লড়তে পারবে তো সে? আনন্দের মাঝেও এই অজানা ভয় পিছু ছাড়ছে না পরিবারের ।

জুডোয় রাজ্য ও জাতীয় স্তরে একাধিক পদক পেয়েছে অভিজিৎ। অভিজিতের অন্য এক ভাই বিশ্বজিৎ । হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত । হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা করেও কোনও লাভ হয়নি । ভেলোরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিশ্বজিতের লিভার নষ্ট হয়ে গেছে । প্রতিস্থাপন করতে হবে । কিন্তু সে যে অনেক টাকার ধাক্কা । কীভাবে সামলাবেন এতকিছু ? ছোটো ছেলের স্টার পাওয়ার আনন্দের মাঝেও সেই দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না তার ।

কী বলছে আসানসোলের অভিজিৎ গড়াই ?

ছোটো ছেলে অভিজিৎ বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায় । ব্লাইন্ড স্কুলের শিক্ষকরা যেভাবে তার জীবনে আলো এনেছেন, সেও একইভাবে দৃষ্টিহীন ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে আলো আনতে চায় । কিন্তু উচ্চশিক্ষার জন্য যে অনেক টাকা লাগবে । এদিকে সামনে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চিন্তা, বড় ছেলের লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য অর্থ সংগ্রহের চিন্তা । এতসব সামলাবেন কীভাবে ? এই পরিস্থিতিতে অভিজিতের বাবা বানেশ্বরবাবু, মা রেখাদেবী সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারের কাছে আবেদন রেখেছেন সাহায্যের জন্য । আগামী ভবিষ্যতের কথা মাথায় আসতেই গা শিউরে ওঠে বাণেশ্বরবাবুর । চিন্তা হয়, যদি সাহায্য না মেলে ! তাহলে হয়ত অতলে হারিয়ে যেতে হবে পরিবারকে ।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর