
উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ জেলার করছনা তহসিলের ইসোটা লোহাগপুর গ্রামে শনিবার রাতে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ৩৫ বছর বয়সী দলিত কৃষক দেবী শঙ্করকে হত্যা করে তার শবদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ এই ঘটনায় সাতজন উচ্চবর্ণের ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছে, যাদের মধ্যে ছয়জন একই পরিবারের সদস্য। তবে এখনও কোনো গ্রেফতারি না হলেও, ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে অভিযুক্তদের একজন, দিলীপ সিং (২৮), দেবী শঙ্করের বাড়িতে এসে তাকে ক্ষেতে কাজে সাহায্য করার কথা বলে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। পরদিন রবিবার সকালে গ্রামের একটি বাগানে শঙ্করের অর্ধদগ্ধ শবদেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ক্ষেতে কাজ শেষ করার পর শঙ্কর এবং অভিযুক্তরা পাশের বাগানে মদপান করছিলেন। সেখানে এক স্থানীয় মেয়েকে নিয়ে তর্ক বাধে। তর্কের জেরে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্তরা শঙ্করের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে এবং পরে গলা টিপে তাকে হত্যা করে। প্রমাণ নষ্ট করতে তারা শবদেহে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে একজন মহিলাকে নিয়ে বিবাদ মূল কারণ হতে পারে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নিশ্চিত হয়েছে যে শঙ্করকে প্রথমে গলা টিপে হত্যা করা হয়, তারপর তার দেহে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে, যা পুলিশের এই তত্ত্বকে সমর্থন করে।
দেবী শঙ্করের বাবা অশোক কুমার ওরফে বাগ্গি জানিয়েছেন, শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ দিলীপ সিং তাদের বাড়িতে এসে তার ছেলেকে নিয়ে যায়। রবিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় তাদের খবর দেওয়া হয় যে শঙ্করের শবদেহ পোড়ানো হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, অভিযুক্তরা পরে তাদের বাড়িতে ফিরে এসে জাতিগত অপমানজনক মন্তব্য করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। শঙ্করের ভাই শ্যামজি দাবি করেছেন, “এটা একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। দিলীপ সিং আমার ভাইকে ক্ষেতে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করিয়েছে।”
এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যা, দাঙ্গা, অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন এবং তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (এসসি/এসটি) আইনের ধারায় করছনা থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে দিলীপ সিং, মনোজ সিং, শেখর সিং, মোহিত, অজয় সিং, বিনয় সিং, সোনু সিং এবং একজন অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম রয়েছে।
দেবী শঙ্করের স্ত্রী পাঁচ বছর আগেই মারা গেছেন। তার তিন সন্তানের মধ্যে একজন ১৮ বছরের কন্যা রয়েছে। এই ঘটনায় তার পরিবার শোকাহত এবং ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে।

বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “কর্ছনায় সামন্ততান্ত্রিক শক্তির হাতে এক দলিত ব্যক্তির নৃশংস হত্যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ধরনের অপরাধী ও সমাজবিরোধী উপাদানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সরকারের উচিত এই ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”
প্রয়াগরাজের উপ-পুলিশ কমিশনার বিবেক চন্দ্র যাদব জানিয়েছেন, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং স্থানীয়দের বয়ান রেকর্ড করা হচ্ছে। তদন্তে দুজন অভিযুক্তের সঙ্গে আরও দুজনের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে, যাদের নাম এফআইআরে উল্লেখ নেই।এই ঘটনা গ্রামে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, যেখানে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর রয়েছে।