
রাজস্থানের আলওয়ারে একটি মন্দিরে বিরোধী দলের নেতা তিকারাম জুলির প্রবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তিকারাম জুলি, যিনি দলিত সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধি, রাম নবমীর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আলওয়ারের আপনা ঘর শালিমারে অবস্থিত রাম মন্দিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার পর বিজেপির প্রবীণ নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক জ্ঞানদেব আহুজা মন্দিরে একটি “শুদ্ধিকরণ” অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন, যা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
জ্ঞানদেব আহুজা জুলির উপস্থিতির তীব্র বিরোধিতা করে তাকে “হিন্দুত্ববিরোধী” এবং “সনাতনবিরোধী” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন যে জুলির মন্দিরে প্রবেশের ফলে পবিত্র স্থানটি অপবিত্র হয়ে পড়েছে। এই কারণে তিনি পরের দিন মন্দিরে গিয়ে গঙ্গাজল ছিটিয়ে শুদ্ধিকরণের কাজ করেছেন। আহুজার মতে, যারা “রামের অস্তিত্বে” সন্দেহ প্রকাশ করে, তাদের মতো “অপবিত্র” ব্যক্তিদের উপস্থিতি মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করেছে। তিনি আরও বলেছেন, “মন্দিরকে অশুদ্ধ করা উচিত নয়। এটি শ্রী রামের মন্দির, যেখানে আমি গঙ্গাজল ছিটিয়েছি।”
অন্যদিকে, তিকারাম জুলি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, “বিজেপির এই আচরণ তাদের দলিতদের প্রতি মনোভাবের প্রকাশ। আমি বিধানসভায় দলিতদের কথা তুলে ধরেছি এবং অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছি। কিন্তু বিজেপি মনে করে, আমি দলিত বলে মন্দিরে গেলে তা গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি কেবল আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের উপর আঘাত নয়, অস্পৃশ্যতার মতো একটি অপরাধকে সমর্থন করার প্রমাণ।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “বিজেপি কি দলিতদের এতটাই ঘৃণা করে যে আমরা পূজা করলেও তাদের সহ্য হয় না? ঈশ্বরের উপর কি শুধু বিজেপি নেতাদেরই অধিকার আছে?”
এই ঘটনার পর কংগ্রেস দল রাজ্যের সব জেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এই ঘটনাকে “সংকীর্ণ মানসিকতার” প্রকাশ বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “২১শ শতাব্দীর সভ্য সমাজে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের উচিত এই ঘটনায় তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা।” কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতাসরাও এটিকে “দলিতদের প্রতি বিজেপির ঘৃণা ও বিদ্বেষের” প্রমাণ বলে অভিহিত করেছেন।
বিজেপি অবশ্য এই ঘটনা থেকে নিজেদের আলাদা করার চেষ্টা করেছে। দলের মুখপাত্র লক্ষ্মীকান্ত ভরদ্বাজ বলেছেন, “বিজেপি এ ধরনের বিশ্বাসে ভর করে না। জ্ঞানদেব আহুজা তার নিজের বক্তব্যের জন্য দায়ী।”

তিকারাম জুলি আলওয়ার গ্রামীণ কেন্দ্র থেকে তিনবারের বিধায়ক (২০০৮, ২০১৮, ২০২৩) এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। তিনি ২০০৫-০৮ সালে আলওয়ার জেলা প্রমুখ ছিলেন এবং পরে আলওয়ার কংগ্রেসের জেলা সভাপতি হন। ২০২১ সালে তিনি অশোক গেহলট মন্ত্রিসভায় সমাজকল্যাণ ও কারাগার বিভাগের ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে, জ্ঞানদেব আহুজা আরএসএসের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রাখেন এবং রামগড় কেন্দ্র থেকে তিনবার বিধায়ক (শেষবার ২০১৩) নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এই ঘটনা রাজস্থানের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। জনমত বিভক্ত হয়ে পড়েছে, এবং এই বিতর্ক আগামী দিনে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।