পৃথিবী অতিমারীর ভয়াবহ এক পরিস্থিতি কাটিয়ে ধীরে ধীরে সেরে উঠছে। এতদিনের স্তব্ধ হয়ে যাওয়া পৃথিবী আবার ছন্দে ফিরেছে। এই শুভারম্ভর প্রাক্কালে গত ৯ জানুয়ারি ২০২১এ দমদম নাগেরবাজারের কাছে থিয়ে এপেক্সে নাট্যে-গানে এক হিমেল সন্ধ্যা দর্শকদের উপহার দিল বাগুইআটি সহজিয়া নাট্যসংস্থা, যার নাম “শীতের শহরে সহজ সন্ধ্যা”।
প্রথম নাটক ৱ্যাটরেস। সমাজের বদ্ধমূল কিছু ধারণার মুখে সজোরে এক থাপ্পড় মেরেছেন নাট্যকার প্রশান্ত সেন। সেরা হওয়ার প্রতিযোগিতায় কীভাবে মরে যায় একটা জীবন এবং তার সাথে জড়িয়ে থাকা স্বপ্নগুলো, সেটাই এই নাটকে ভালোভাবে ফুটে উঠেছে । এই ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতা হার ছাড়া কিছুই দেবে না আমাদের, এই অতি সরল অথচ দামি কথাই নাট্যকার আমাদের সহজ ভাষায় সাবলীল উপস্থাপনায় বুঝিয়েছেন। প্রথাগত পড়াশোনা আমাদের তথাকথিতভাবে শিক্ষিত হবার প্রমাণ দেয়, কিন্তু মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধূলা, গল্পের বই এবং সর্বোপরি খুশি মনে বাঁচাটাই প্রয়োজন । অথচ আমরা শুধুই প্রথম হওয়ার দিকে ছুটেই চলেছি, ছুটতে বাধ্য হচ্ছি। এ যেন শিক্ষার সার্কাস ছাড়া আর কিছুই না। এই গম্ভীর বিষয়ের নাটকের মধ্যেও কয়েকটি কমেডি চরিত্রের স্যাটায়ারধর্মী সংলাপ বেশ মনোগ্রাহী ।
অভিনয়ে দর্শকদের মন কেড়েছে সম্রাট সরকার, কৃত্তিকা বোস, ঋত্বিক ভট্টাচাৰ্য্য, তনিমা মুখার্জী, প্রীতি সাঁতরা, অর্ণিশা সেন, রবীন চক্রবর্তী এবং প্রশান্ত সেন। আলোক পরিকল্পনা করেছে সম্রাট সরকার ও প্রক্ষেপণ করেছেন রূপ সরকার। শব্দ পরিকল্পনা তে অর্নিশা সেন এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণে ঋতিকা ঘোষ। নৃত্যাংশে মহুয়া সরকার এবং নৃত্য পরিচালনায় তনিমা মুখার্জী। নাটকের ব্যবহৃত একটি অনবদ্য গান লিখেছেন নাট্যকার স্বয়ং ও গেয়েছেন তনিমা মুখার্জী। মঞ্চসজ্জায় তন্ময় মণ্ডল। রূপসজ্জায় ছিলেন মহুয়া সরকার ও তনিমা মুখার্জী। এই নাটকের নাট্যকার ও নির্দেশক প্রশান্ত সেন।
এই রেশ কাটতে না কাটতেই হাতে গিটার এবং কণ্ঠে জাদু নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন এই সময়ে জনপ্রিয় বাংলা গায়ক শৌর্যদীপ সান্যাল। বলিষ্ঠ লেখনী আর নিজেস্ব সুরের জাদুতে কখন যে সময় পেরিয়ে গেলো তা বোঝা দায়। এই নবীন গায়কের দিনযাপনের গান সেই দিন টি কে আরো সুরেলা করে তুলেছিল। যোগ্য সঙ্গতে অর্ঘ্য ও কৃত্তিকা বোস।
এবার শেষের পালা। যেন কেউ স্বপ্ন থেকে টেনে বাস্তবের মাটিতে আঁছড়ে ফেলবে আমাদের। ভাবতেও অবাক লাগে যেখানে দেশকে মা রূপে পূজা করা হয় সেই দেশেই নারীরা সব থেকে বেশি বঞ্চিত। এ দেশে জন্মের আগেই মাতৃগর্ভে হত্যা করা হয় কন্যাভ্রূণকে। এই গর্হিত অপরাধেই প্রতিবাদে নাট্যকার প্রশান্ত সেনের নাটক জড় আয়ু। স্বপ্নলতা যেন প্রতিনিধিত্ব করছে প্রতিটি মেয়ের স্বপ্নের, তাদের বেড়ে ওঠার। স্বপ্নলতার প্রতিটি বয়সের জীবন পরিক্রমাকে অনবদ্য অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলেছে এই নাটকের একক অভিনেত্রী তথা নির্দেশক অর্ণিশা সেন। স্বপ্নলতার চরিত্রে তার অভিনয় আমাদের শিহরিত ও মুগ্ধ করেছে বারংবার। পুরো নাটকটির আবহ প্রক্ষেপণের দায়িত্বে ছিল ঋত্বিক ভট্টাচার্য্য। নাটকটির গানের কথা স্বয়ং নাট্যকারের। লাইভ গিটারে শৌর্যদীপ সান্যাল। আলোক প্রক্ষেপণ করেছে সম্রাট সরকার। মঞ্চ সজ্জায় ছিলেন তন্ময় মন্ডল ও রেণু দাস। রূপসজ্জায় তনিমা মুখার্জী।
পুরো অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ঋতিকা ঘোষের দক্ষ সঞ্চালনায়।
বাগুইআটি সহজিয়া নাট্যসংস্থার তাদের নাট্যবাসরে আরো বেশি বেশি মাতিয়ে তুলুক দর্শকদের।