ইন্দোরে নামাজের সময় মসজিদ ভাঙচুরের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসবাদীদের কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করল শুধু মুসলিমদের, চরম উত্তেজনা এলাকায়

নিউজ ডেস্ক : মধ্যপ্রদেশে গেরুয়াবাদী বিজেপি সরকার আসার পর থেকে হিন্দুত্ববাদি সন্ত্রাসীরা নয়া উদ্দমে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করেছে রাজ্য জুড়ে। পূর্ণ সাহায্য করছে মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহানের গেরুয়া সরকার এবং তার পুলিশ বাহিনী। করোনার অজুহাতে বিধানসভার অধিবেশন বন্ধ হলেও দিব্যি অনুমতি দিচ্ছে হিন্দুত্ববাদীদের সব মিছিলের।

  • কয়েকদিন আগেই মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়নী শহরের এক মুসলিম প্রধান এলাকা বেগম বাগে মুসলিমদের উদ্দেশ্যে আপত্তিকর, ইসলামবিরোধী এবং সম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত স্লোগান দেয় বজরং দল আরএসএস, বিজেপি, সনাতন সংস্থা এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা। পরিকল্পনা মতো আক্রমণ করে স্থানীয় মুসলমানদেরকে। ভাঙচুর করে আশপাশে থাকা মুসলিম বাড়িগুলোকে ভেঙে দেয়া হয় তাদের দোকান এবং গাড়িও। আত্মরক্ষার্থে ইট পাটকেল ছোড়ে কিছু শিশু এবং মহিলা। পরবর্তীতে তাদের কে গ্রেপ্তার করে গেরুয়া সরকারের পুলিশ। তাদের বাড়িঘর গুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয় সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের কথা কোনো বিবৃতি ও দেয়া হয়নি গেরুয়া সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। মামলা দায়ের করা হয় ১৫ জনের বিরুদ্ধে। সেই ১৫ জন সবাই মুসলিম। তারপর গত মঙ্গলবারের ঘটনা ঘটল মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের গৌতম্পুরা থানার চান্দখেরী এলাকায়।

বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে সেখানে রাম মন্দির তৈরীর উদ্দেশ্যে অর্থ সংগ্রহের নাম করে শত শত গেরুয়া উগ্রবাদী মিছিল বার করে মধ্যপ্রদেশের ওই এলাকায়। মিছিলের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম প্রধান এলাকায় গিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান তোলা এবং তাদেরকে উত্তেজিত করে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ আয়োজন করা। সামনে পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু সহ বেশকিছু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি চাইছে এই সময়ে দেশের কৃষক বিরোধী আন্দোলন থেকে মানুষের মনোযোগ সরাতে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ তৈরি করতে। তার জন্যই মধ্যপ্রদেশে এমন সব ঘটনার অবতারণা করছে তারা। এমন মত মধ্যপ্রদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের। ইন্দোরের ওই এলাকায় গেরুয়া উগ্রবাদীদের মিছিল মুসলিম প্রধান এলাকার একটি মসজিদের সামনে এসে থেমে যায়। নামাজ চলাকালীন সেখানে ইচ্ছা করে লাউডস্পিকারে হনুমান চালিশা পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলে গেরুয়া সন্ত্রাসীরা। তাতেও মুসলিমরা কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালে মসজিদের উপর উঠে পড়ে তারা। মিনারের ক্ষতি করার চেষ্টা করে গেরুয়া সন্ত্রাসীরা। ভেঙে দেয়া হয় মসজিদের বাইরে পার্ক করা বেশ কিছু মুসুল্লির গাড়ি। এই ঘটনায় আশপাশের এলাকা থেকে হাতেগোনা কিছু মুসলমান যুবক প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসে। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠে গেরুয়া সন্ত্রাসীরা। মারধর করা হয় তাদের। মধ্যপ্রদেশ পুলিশ গেরুয়া উগ্রবাদীদের রুখে দেওয়ার কোন প্রচেষ্টা করেনি।

পরবর্তীতে ইন্দোরের আইজিপি যোগেশ দেশমুখ, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখছি যে সমস্ত ব্যক্তিরা এর সঙ্গে জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। সবাই আশঙ্কিত যে পুলিশ এখানেও বেগম বাঘের মত শুধুমাত্র মুসলিমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে।

সাম্প্রদায়িক এই সমস্ত ঘটনাবলি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস। তারা এই ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত দাবি করেছেন। মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস বিধায়ক আরিফ মাসুদ বলেছেন, ” কারনা আবহের দোহাই দিয়ে মধ্যপ্রদেশের শীতকালীন অধিবেশন বাতিল করেছে বিজেপি সরকার। তাহলে কিভাবে এই সব সংগঠনগুলিকে এইসব মিছিলের অনুমতি দেয়া হচ্ছে?”

Latest articles

Related articles