![](https://nbtv.news/wp-content/uploads/2025/02/download-60-1.jpg)
বিজেপি পরিচালিত মশিক্ষা ও পুষ্টি – দুইটি ক্ষেত্রেই ভারতের শিশুদের মৌলিক অধিকার। মধ্যাহ্নভোজ (MDM) স্কিম কেবলমাত্র স্কুলে বাচ্চাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে না, বরং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অপরিহার্য পুষ্টি সরবরাহ করে। কিন্তু সম্প্রতি মহারাষ্ট্র সরকারের এমন এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যা এই পুষ্টির সুরক্ষা ও উন্নয়নের পথে বড় এক বাধা সৃষ্টি করেছে। ডিম ও মাইলেট ভিত্তিক মিষ্টান্নের জন্য বরাদ্দ করা ₹৫০ কোটি টাকার ফান্ডিং তুলে নেওয়ার মাধ্যমে, সরকার এমন এক অবৈজ্ঞানিক ও অকার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে, যা বাচ্চাদের পুষ্টির মৌলিক চাহিদাকে উপেক্ষা করে।
ডিম একটি সম্পূর্ণ প্রোটিন উৎস হিসেবে বিবেচিত, যা শিশুদের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিদিন যথাযথ পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ অপরিহার্য; যেখানে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরে ১২ গ্রাম ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ২০ গ্রাম প্রোটিন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ডিমে থাকা ভিটামিন, খনিজ ও সুষম প্রোটিন শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই পুষ্টির গুরুত্বের প্রতি অবহেলা করে, মহারাষ্ট্র সরকারের পদক্ষেপ শুধুমাত্র শিশুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, বরং সামগ্রিকভাবে সমাজের ভবিষ্যতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
মহারাষ্ট্র সরকারের ২৮ জানুয়ারি এক সিদ্ধান্তপত্রে উল্লেখ করে যে, “ডিম পুলাও ও মিষ্টি খিচুড়ি/নাচনি সত্যা ইত্যাদি বিকল্প রূপে প্রদান করা হবে” এবং সরকারি ফান্ডিং এর কোনো অতিরিক্ত বরাদ্দ করা হবে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে, মহারাষ্ট্রে মাত্র এক বছরের মধ্যে চালু হওয়া ডিম যুক্ত মধ্যাহ্নভোজ স্কিমকে দায়িত্বজ্ঞানহীন, অবৈজ্ঞানিক, ব্যতিক্রমী, অপ্রয়োজনীয় ও অবাস্তব পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
২০২৪-২৫ এর জন্য রাজ্যের মোট ব্যয়ের ₹৬.১২ লাখ কোটি টাকার মধ্যে কেবলমাত্র ০.০৪% PM-POSHAN স্কিমে ব্যয় করা হচ্ছে।
গত চার বছর ধরে এই স্কিমে ব্যয় সরকারের মোট ব্যয়ের ১% এর নিচে ছিলো এবং ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায়, যখন শিশুদের পুষ্টির অবস্থা ইতিমধ্যেই সংকটাপন্ন (নাইটি আয়োগের তথ্য অনুযায়ী ৩৫% বাচ্চা ওজনহীন ও ৩৬% স্থূলতা) – তখন এমন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা একেবারেই অযথার্থ।
অর্থনৈতিক দিক থেকে রাজ্যের ফাঁক-ফোকর থাকলেও, শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিতকরণ একটি ন্যূনতম কর্তব্য। ২০২২-২৩ সালে ১.৯% ফিসকাল ডিফিসিটের মধ্যে ডিম যুক্ত মধ্যাহ্নভোজ চালু হলেও, মাত্র এক বছরের মধ্যেই এই কার্যক্রমে বিনিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে, বেকার ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের পুষ্টির অধিকার থেকে অবাঞ্ছিতভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
গত দুই বছরের মধ্যে, বিশেষ করে নভেম্বর ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত, খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি প্রায় ৮% এর বেশি। এর ফলে, দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বাচ্চাদের জন্য একমাত্র পুষ্টির উৎস হিসেবে স্কুলের মধ্যাহ্নভোজ থাকলেও, এর থেকে প্রাপ্ত উপকারিতা এখন হঠাৎ কমে যাচ্ছে।
বিরোধী দলগুলির প্রতিনিধিরা, যেমন মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অতুল লোন্ধে, এই সিদ্ধান্তকে “আর্থিক ও মানসিক দারিদ্র্যের” পরিচায়ক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আদিত্য ঠাকরে, শিব সেনা (UBT) থেকে, বলেছেন যে, “অনেক শিক্ষার্থীর জন্য মধ্যাহ্নভোজই একমাত্র পুষ্টির উৎস। এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র রাজনীতিবিদদের স্বার্থপরতার পরিচয় দেয়।”
জনমত ও সমাজের প্রতিক্রিয়া: বিভিন্ন এনজিও ও সমাজকর্মী দল এই সিদ্ধান্তকে কঠোরভাবে সমালোচনা করছেন, তাদের মতে, “আর্থিক সীমাবদ্ধতার নামে শিশুদের মৌলিক পুষ্টি অধিকার থেকে বিচ্ছিন্ন করা একেবারেই অসহনীয়।”
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও পুষ্টি ক্ষেত্রে প্রমাণিত যে, প্রোটিন শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। মহারাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত, যা একদিকে আর্থিক নিয়ন্ত্রণের নামে নেওয়া হলেও, তা দেশের ভবিষ্যতের কান্ডারী শিশুদের স্বাস্থ্যে কুপ্রভাব ফেলবে।
২০১৯ সালের নীতি আয়োগের তথ্য অনুসারে, শিশুদের মধ্যে ওজনহীনতা ও পুষ্টিহীনতার হার অপরিবর্তিত থাকায়, পুষ্টির উপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
ডিমের মতো সস্তা ও সহজলভ্য প্রোটিন উৎসকে বাদ দিলে, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উদ্বেগ আরও বাড়বে।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিকর নয়, বরং এটি সামাজিক দায়বদ্ধতার অবহেলার পরিচায়ক। বাচ্চাদের উন্নয়নের জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করা একটি মৌলিক নৈতিক দায়িত্ব, যা বর্তমান সিদ্ধান্তে স্পষ্টভাবে অনুপস্থিত।
মহারাষ্ট্র সরকারের ডিম ও আমিষ খাদ্যের জন্য বরাদ্দ করা তহবিল তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত একদিকে আর্থিক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হলেও, এর প্রভাব শিশুদের মৌলিক পুষ্টি অধিকার, স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর মারাত্মক।
পুষ্টিবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য নীতির বিপরীতে, এই পদক্ষেপ একেবারেই অবৈজ্ঞানিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। বিভিন্ন এনজিও, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতারা এই সিদ্ধান্তকে কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং এটার ফলে সমাজের নিম্নবিত্ত অংশের প্রতি একধরনের অবহেলা ও অমানবিক আচরণ প্রকাশিত হয়েছে।
সরকারের উচিত, অল্প সময়ের আর্থিক লাভের পরিবর্তে, দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নীতির প্রতি অটল থাকা এবং শিশুদের পুষ্টির মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। পরিবর্তে, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
এটা থেকে স্পষ্ট যে, বর্তমান পদক্ষেপ কেবলমাত্র এক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং তা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার প্রতি অবিচার এবং অবহেলার পরিচায়ক। আমাদের প্রত্যেকের উচিত, নীতিগত ভুল ও প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক তথ্যে ভিত্তি করে সরকারকে যথাযথ দায়িত্ব নিতে আহ্বান জানানো, যাতে বাচ্চাদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম পুষ্টির পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।হারাষ্ট্রের সরকারের?