
মধ্যপ্রদেশের দামোহ জেলায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে এক ব্যক্তি নিজেকে ব্রিটিশ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দিয়ে একটি বেসরকারি খ্রিস্টান মিশনারি হাসপাতালে অনুমোদনহীন হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার করেছেন। এই ঘটনায় অন্তত সাতজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে এই মর্মান্তিক ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
প্রাথমিকভাবে এই ব্যক্তি নিজেকে ডা. এন জন কেম নামে পরিচয় দিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে আগত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কিন্তু তদন্তের সময় প্রকাশ পায় যে, তার আসল নাম নরেন্দ্র বিক্রমাদিত্য যাদব। তিনি একজন প্রকৃত ব্রিটিশ চিকিৎসকের নামে জাল নথিপত্র জমা দিয়ে এই প্রতারণা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ।
জানা গেছে, এই ভুয়ো চিকিৎসক হাসপাতালে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিসহ বেশ কয়েকটি জটিল অস্ত্রোপচার করেছেন। তার যোগ্যতা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। মাত্র এক মাসের মধ্যে একের পর এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে এই কেলেঙ্কারি সামনে আসে।
দামোহ জেলার শিশু কল্যাণ কমিটির প্রধান ও আইনজীবী দীপক তিওয়ারি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তিনি এএনআই-কে বলেন, “কিছু রোগী, যারা বেঁচে গেছেন, আমাদের কাছে এসে জানিয়েছেন যে তারা তাদের বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে এই ব্যক্তি অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় তারা তাদের বাবাকে জবলপুরে নিয়ে যান। পরে আমরা জানতে পারি, এই ভুয়ো চিকিৎসকের নাম নরেন্দ্র যাদব। আসল চিকিৎসক ব্রিটেনে আছেন। তার বিরুদ্ধে হায়দ্রাবাদে একটি মামলাও রয়েছে।”
‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে একজন রোগী প্রথম এই চিকিৎসকের রোগ নির্ণয়ের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিওয়ারি বলেন, “একজন রোগী অভিযোগ করেছিলেন যে এই ডাক্তার সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারছেন না। আমরা তদন্ত শুরু করতেই তিনি এলাকা থেকে পালিয়ে যান।”
অভিযোগ জেলা কালেক্টর ও প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার কাছে পৌঁছানোর পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। হাসপাতালের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত একটি “সরকার-অনুমোদিত সংস্থা”র মাধ্যমে হাসপাতালে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, “তিনি পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা পুলিশের কাছে তার সন্দেহজনক আচরণের বিষয়ে অভিযোগ জানাই এবং তার সমস্ত নথি তদন্ত কমিটির কাছে জমা দিই।”

দামোহের পুলিশ সুপার অভিষেক তিওয়ারি এএনআই-কে জানান, এই ঘটনায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ডা. এন জন কেম নামে এই ব্যক্তি ভুয়ো অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি অস্ত্রোপচার করেছেন। তার চিকিৎসা নথি সন্দেহজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে।”
এই বিতর্ক আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, হাসপাতালটি কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সুবিধা নিচ্ছিল। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য প্রিয়াঙ্ক কানুনগো এএনআই-কে বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি যে একজন ভুয়ো চিকিৎসক এই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করেছেন। হাসপাতালটি আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এবং সরকারি অর্থ নিচ্ছে। এটি গুরুতর বিষয়। আমরা তদন্ত শুরু করেছি।”
কানুনগো জানিয়েছেন, ৭ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি দল দামোহে গিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করবে। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “কেউ যদি এই মামলা সম্পর্কে তথ্য দিতে চান, তবে তারা দামোহে তদন্ত দলের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।”
তদন্তে অভিযুক্তের জমা দেওয়া নথির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য হাসপাতাল থেকে বেশ কিছু দলিল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এছাড়া, নরেন্দ্র যাদবের অপরাধমূলক ইতিহাসও প্রকাশ পেয়েছে, যার মধ্যে হায়দ্রাবাদে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
এই ব্যক্তির বিতর্কিত ইতিহাস আরও উদ্ঘাটিত হয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে তিনি একটি জাল সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ফ্রান্সে পাঠানোর কথা লিখেছিলেন, যখন সেখানে দাঙ্গা চলছিল। এই পোস্টটি বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সমালোচনার মুখে পড়ে। তিনি জাল পরিচয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ডিজিটালি এডিট করা ছবিও আপলোড করেছিলেন।
দামোহের জেলা কালেক্টর সুধীর কোচার জানিয়েছেন, তদন্ত শেষ হওয়ার পরই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হবে। পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ এখনও প্রমাণ সংগ্রহে ব্যস্ত রয়েছে।