চাপের মুখে ‘হিজাব’ পরার অনুমতি দিলো কর্ণাটকের উডুপি সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

উডুপি কলেজের অভিযোগকারী ছয় ছাত্রী।
উডুপি কলেজের অভিযোগকারী ছয় ছাত্রী।

এনবিটিভি ডেস্কঃ  সোমবার অবশেষে উডুপিতে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে শ্রেণীকক্ষে অংশগ্রহণের অনুমতি দিল জেলা প্রশাসন। গত কয়েকদিন কর্ণাটকের উডুপি কলেজ বেশ কিছু ছাত্রীদের হিজাব পরে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছিলো। এই ঘটনা কলেজের কর্তৃপক্ষ দ্বারা সমাধান হয় নাই। হিজাব তর্জার খবর জেলা প্রশাসনের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। কর্ণাটকের উডুপির ডেপুটি কমিশনার শেষ পর্যন্ত ছাত্রীদের হিজাব পরে পাঠঘরে প্রবেশের অনুমুতি  করতে বলে শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি সমাধান করেন।

 উল্লেখ্য, বছরের শেষের দিকে কর্ণাটকের উডুপি সরকারি মহিলা প্রাক-ইউনিভার্সিটি কলেজে বেশ কিছু ছাত্রীদের হিজাব পরে শ্রেণী কক্ষে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। এমনকি ছাত্রীদের উর্দু ভাষা ব্যবহারের বিশেষ ছুৎমার্গ তৈরি হয়েছিল কলেজে। এমন অভিযোগ উঠছিল কর্ণাটকের উডুপি কলেজ খোদ কর্তৃপক্ষর বিরুদ্ধে। অভিভাবক এই সমস্যার সমাধানের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানালে তা সমাধান করতে পারেননি। পরে উর্দু ভাষা ও হিজাব পরিধানের নিষেধাজ্ঞার খবর ছড়িয়ে পরে দেশ জুড়ে। তড়িঘড়ি এই সমস্যা সমাধানের জন্য সামনে আসে স্বয়ং জেলা আধিকারিক।

সরকারি মহিলা প্রি ইউনিভার্সিটি কলেজের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছয় মেয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আমরা হিজাব পরা শুরু করার আগে সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু অধ্যক্ষ আমাদের শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করতে বাধা দেন এবং আমরা বৈষম্য বোধ করছিলাম।”

শ্রেণী কক্ষে প্রবেশের বাধা উল্লেখ করে ছাত্রীরা বলেন, “গত তিন দিন ধরে আমরা প্রতিদিন কলেজে যাচ্ছি এবং ক্লাসে উপস্থিত না হয়ে বাড়ি ফিরছি। আমরা তিনদিন ক্লাসরুমের বাইরে প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছিলাম।”

ছাত্রীদের আরও অভিযোগ, “আমাদের বাবা-মাকে কলেজে নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল কিন্তু তারা এসে পৌঁছলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা কলেজের বাইরে অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। আমাদের অভিভাবকরাও অধ্যক্ষের সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অধ্যক্ষ তাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি ছিলেন না। বরং তিনি জোর দিচ্ছেন যে শ্রেণীকক্ষের ভিতরে হিজাবের অনুমতি নেই।”  

বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। “আমাদের উর্দু বা বিয়ারি ভাষায় কথা বলার অনুমতি নেই, অন্য মেয়েদের তুলু, কোঙ্কানি এবং কন্নড় ভাষায় কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।” ‘সংক্ষুব্ধ’ শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করেছিল যে তারা উপস্থিতি ঘাটতির মুখোমুখি হতে পারে।

এদিকে গার্লস ইসলামিক অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়া (জিআইও) এর কিছু সদস্য সহ কলেজের ছয় শিক্ষার্থী সহ একটি প্রতিনিধি দল এই ঘটনার বিষয়ে উডুপির ডেপুটি কমিশনার কুরমা রাও-এর কাছে যান।

জেলা আধিকারিকের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলা কর্তৃপক্ষের মতে যে ছয়জন মেয়েকে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখা হয়েছিল তারা সেই প্রতিনিধি দলের অংশ ছিল যারা উদুপির জেলা প্রশাসক কুরমা রাও-এর সাথে দেখা করে এবং মেয়েদের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত করার অনুরোধ করেছিল।  

মেয়েদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ রুদ্র গৌড়া তাদের ক্লাসরুমে ‘হিজাব’ (হেডস্কার্ফ) পরতে দেননি। তখন উডুপির ডেপুটি কমিশনার কুরমা রাও কলেজের অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেন।  অধ্যক্ষ মনে করেন যে, “শ্রেণীকক্ষে অভিন্নতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মটি অনুসরণ করা হচ্ছে।”

অধ্যক্ষ গৌড়া আরও স্পষ্ট করেছেন যে, কলেজে ৬০টিরও বেশি মুসলিম মেয়ে ছাত্রী অধ্যয়নরত ছিল। তিনি বলেন, “এই ছয়জন শিক্ষার্থী ছাড়া তাদের কেউ হিজাব পরে না।

উদুপির ডেপুটি কমিশনার শেষ পর্যন্ত অধ্যক্ষর সঙ্গে আলাপ আলোচনার পরেই ছাত্রীদের হিজাব পরে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করতে বলে শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি সমাধান করেন।

“হিজাব নিয়ে রাজনীতি”

ইতিপূর্বে ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (সিএফআই) এবং সোশ্যালিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (এসডিপিআই) হিজাব পরিধান করে ছাত্রীদের ক্লাসে যেতে না দেওয়ার জন্য সরকারি মহিলা উডুপি কলেজের অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত না করা হলে তীব্র প্রতিবাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।

উডুপি এসডিপিআই সভাপতি নাজির আহমেদ সতর্ক করে বলেন যে, “যদি ছয়টি মেয়ে ছাত্রীকে ক্লাসে যেতে দেওয়া না হয়, আমরা এই ‘ফ্যাসিস্টদের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব।”

 সিএফআই রাজ্য কমিটির সদস্য মাসুদ মান্নাও ছাত্রীদের উপস্থিতি না দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের বরখাস্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “কলেজে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা উচিত এবং কলেজ যেন তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস পালনে বাধা না দেয়।”

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর