
আবারো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে, কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন। তৃণমূল এবং এসএফআইয়ের খন্ড যুদ্ধে কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রাক্তন ছাত্র সাহিল আলিকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। বর্তমানে এই ছাত্র তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। সাহিল আলিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে পেশ করেছে কলকাতা পুলিশ।
চিরকালই সংখ্যালঘু ভোট প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের কাছে, একটা এক্সফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু তোষণের পেছনে কি কোন গভীর ষড়যন্ত্র? এর আগে ২০২২ সালে আনিস খানের মৃত্যু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল। যাদবপুর কাণ্ডে সাহিল আলীর গ্রেপ্তারিতে আবারো প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকার। নানান মহলে প্রশ্ন উঠছে, বারবার কেন শুধুমাত্র সংখ্যালঘু শিক্ষিত যুবকদের রাষ্ট্রের আস্ফালনের শিকার হতে হচ্ছে? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংখ্যালঘু সেবা মূলক মনোবৃত্তি কি, শুধুই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার লালসা?

এপিডিয়ার এর জেনারেল সেক্রেটারি রঞ্জিত সুর এনবিটিভি কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “সংখ্যালঘু শিক্ষিত যুবকরা যদি রাজনীতিতে সক্রিয় হয় এবং তারা যদি সরকারের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে তাদের কণ্ঠ রোধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে সরকার। তবে বিজেপি যেমন সংখ্যালঘু বিরোধী মনোভাব নিয়ে চলে, রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে এমনটা বলা মুশকিল।” তিনি অত্যন্ত উদ্বেগ এবং আশঙ্কার সঙ্গে এও জানান, “সাহিল, বীরভূমের মহম্মদ বাজারের ছেলে। ওখানেই তার বাড়ি। ওই অঞ্চলে দেউচা পাঁচামি খনি নিয়ে মানুষের মধ্যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটা ক্ষোভ রয়েছে। সাহিলকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে একটা আশঙ্কা হচ্ছে, দেউচা পাঁচামির প্রতিবাদের সঙ্গে এই গ্রেপ্তারির কোন যোগাযোগ আছে কিনা।”
একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়ের, কিছু সংখ্যক মানুষকে বারবার হতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার শিকার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ঘটনায় সাহিল আলিকে গ্রেফতার এবং ২০২২ সালে আনিস খানের মৃত্যুর ঘটনা বারবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুরদের অসহায়তাকে। হাওড়ার মুসলিম ছাত্রনেতার রহস্যজনক মৃত্যুতে আঙ্গুল উঠেছিল পুলিশের উপর।
তৃণমূল কংগ্রেস প্রত্যেকবারই ৩০% সংখ্যালঘু ভোটকে কুক্ষিগত করতে চায়। কিন্তু সমাজের একাংশ মনে করছে, এটাই শাসকের ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধির রণকৌশল। প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রের শাসক দল ও রাজ্যের শাসক দলের মধ্যে ফারাক টা ঠিক কোথায়? বিজেপি বারবার পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কট্টর হিন্দুত্ববাদ কে ব্যবহার করে রাজনৈতিক, এবং সামাজিকভাবে সংখ্যালঘু মানুষদের নিষ্ক্রিয় করতে মরিয়া। অপরদিকে রাজ্যের শাসক দল শিক্ষিত সংখ্যালঘু যুবকদের টার্গেট করে, দমন ও নিপীড়ন চালাচ্ছে, বলে অভিযোগ করছে সমাজের নানান স্তরের মানুষরা। সাহিল আলি, আনিস খান সহ সংখ্যালঘু শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হলে, তাদের নিষ্ঠুর এবং নির্মমভাবে দমন করা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে, আনিস খানের মৃত্যু এবং সাহিল আলির গ্রেফতারির ঘটনাকে কখনোই লঘু বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই দুই ঘটনায় রাজ্য সরকারের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতিকে আরো বেশি করে সামনে নিয়ে আসে।