হেরিটেজ হাউস লর্ড ক্যানিংয়ের বাড়ি পরিচর্যার অভাবে বিলুপ্তির পথে

ইংরেজ আমলের লর্ড ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী বিলাসবহুল বাড়ীটি আজ বিলুপ্তির পথে! পাশাপাশি শেষ হতে চলেছে ব্রিটিশ ইতিহাসের শেষ স্মৃতির অধ্যায়টিও।

১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের সময় অশান্ত উত্তেজিত ভারতবর্ষকে শান্ত করেছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল ও প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং।বিদ্রোহীদের যেমন কড়া হাতে দমন করেছিলেন তেমনই আবার ভালোবাসাও দিয়েছিলেন।এমন কর্মকান্ডের জন্য তাঁর নাম হয় “ক্লেমেন্সি ক্যানিং”।
শতাব্দী প্রাচীন সেই ঐতিহ্যবাহী বিলাসবহুল বাড়িটি থেকে হারিয়ে গিয়েছে লর্ড ক্যানিংয়ের অতীত স্মৃতি। মাতলা নদীর তীরে বিশেষ স্থাপত্য পদ্ধতি অবলম্বন করে তৈরী হয়েছিল দোতলা বাড়িটি। বিলাসবহুল বিশাল বাড়িটির সামনে ছিল সিংহদুয়ার,কেয়ারি ফুলের বাগান আর সবুজ ঘাসের লন এবং ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের খিলান যুক্ত দরজা।

দোতলা এই বাড়ির ২২ টি ঘরের প্রতিটি ঘরের মধ্যে ছিল ইতিহাস।প্রথম তল থেকে দ্বিতীয় তলে ওঠার জন্য রয়েছে একটি দামী প্রশস্থ কাঠের সিঁড়ি। বর্তমানে সেই ইতিহাস কে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে ইতিহাস সৃষ্টি করতে চলেছে।

১৯৬২ সালে ক্যানিংয়ের জয়দেব ঘোষ দম্পতি মুম্বাইয়ের জে এম দাতিয়াল-আরসি কুপার কোম্পানির কাছ থেকে কিনে নেন লর্ডক্যানিংয়ের বাড়িটি। ঘোষ দম্পতির ছেলে বরুণ ঘোষ বিশাল এই বাড়িটি তেমন ভাবে রক্ষণাবেক্ষন করতে সক্ষম হতে পারেননি।জানা যায় এক সময় এই বিলাসবহুল বাড়িটি হোটেল তৈরী করার জন্য কিনতে চেয়ে জয়দেব ঘোষ কে প্রস্তাব দিয়েছিলেন চিত্রাভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী।আবার সাহারা ইন্ডিয়া গোষ্ঠীও বাড়ীটি কিনতে চেয়েছিল।কিন্তু জয়দেব বাবু বিক্রি করেননি।বিশাল বাড়ীতে বসবাস করতেন জয়দেব ঘোষ ও তার স্ত্রী শিখা ঘোষ। ১৫ টি ঘরের মধ্যে দূর্মূল্য বই,বেলজিয়াম কাঁচের নকশা করা আয়না,মেহগণি কাঠের তৈরী টেবিল,ইংল্যান্ডের লরেন্স অ্যান্ড মেয়ো কোম্পানির টেলিস্কোপ সহ অন্যান্য দামি আসবাব পত্র ১৫ টি ঘরের মধ্যে রেখে তালা মেরে দিয়েছিলেন।পরবর্তী গত প্রায় চার পাঁচ বছর আগে ঘোষ দম্পতি মারা যাওয়ায় বাড়িটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে।

অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন ২০০১ এর আইন অনুযায়ী হেরিটেজ বিল্ডিং ঘোষনা করলেও ২০১৮ সালে এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটিকে ঐতিহ্যশালী ভবনের স্বীকৃতি দেয়। যদিও প্রায় চার বছর সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও ভবনটি এখনও অবধি কোন সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি।
সুন্দরবনে বেড়াতে আসা দেশবিদেশের পর্যটকরা আজও ঐতিহাসিক এই ভগ্ন বাড়িটি দর্শন করে সুন্দরবন ঘুরে যান।

প্রশাসনের অবহেলায় সেই থেকে অবহেলিত শতাব্দী প্রাচীন ইংরেজ আমলের স্মৃতি এই বাড়িটি বিলুপ্তির পথে। তাই সুন্দরবনবাসী বার বার দা‌বি তু‌লে‌ছে লর্ড ক্যা‌নিং‌য়ের বা‌ড়ি সংরক্ষণ ক‌রে পর্যটন ক্ষেত্র হি‌সে‌বে গ‌ড়ে তুলুক রাজ্য সরকার। পর্যটনক্ষেত্র হ‌লে পর্যটক‌দের আনা‌গোনা বাড়‌বে। এখা‌নে প্রচুর কর্মসংস্থান হ‌বে। এলাকার গরীব মানুষ‌দের মু‌খে হা‌সি ফুট‌বে।

Latest articles

Related articles