নতুন এক প্রত্যাহন অভিযানে, মার্কিন সামরিক বিমানে করে ২০৫ জন ভারতীয়কে দেশের ফেরতের পথে পাঠানো হয়েছে। টেক্সাস থেকে প্রস্থানের সূচনা করা এই বিমানের যাত্রাপথে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভারত পৌঁছানোর প্রত্যাশা করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রথম উড়ানেই ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করে ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, যা মার্কিন প্রশাসনের ‘অনুপ্রবেশকারী হঠাও অভিযান’-এর অংশ।
মার্কিন সরকারের কঠোর অভিবাসন নীতির আওতায়, অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের নিয়ে বিভিন্ন দেশের মতই ভারতেও ফেরতের ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। যদিও এই বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো নিশ্চিত ঘোষণা দেওয়া হয়নি, তবে ভারতের মার্কিন দূতাবাস স্পষ্ট করে জানিয়েছে—বেআইনি অভিবাসীদের নিয়ে কোন ঝুঁকি নেওয়া যাবে না এবং সীমান্ত সুরক্ষার ব্যাপারে আমেরিকা প্রবল জোর দিচ্ছে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় থেকেই অবৈধ অভিবাসন মোকাবেলায় মারাত্মক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে সার্বিকভাবে ১৮ হাজার ভারতীয়কে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে। এই পদক্ষেপের আওতায় শুধু ভারত নয়, গুয়াতেমালা, পেরু, হন্ডুরাসসহ অন্যান্য দেশেও অবৈধ অভিবাসীদের ফেরতের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ভারতে অবৈধ অভিবাসীদের নিজেদের দেশে ফেরানোর বিষয়ে সদয় মনোভাব থাকলেও, সামরিক বিমানে করে ‘ডিপোর্ট’ করার কৌশলটি কূটনৈতিক পর্যায়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। পক্ষান্তরে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মীমাংসায়, ভারতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং পরস্পরের অব্যাহত সমন্বয় অব্যাহত রয়েছে।
অত্যন্ত কষ্টসহ্য পরিস্থিতি, সীমান্ত পারাপার ও একাধিক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমেরিকাতে পৌঁছানো সেই ভারতীয় শ্রমিকরা শুধুমাত্র নিজের জীবন রক্ষার জন্য নয়, বরং হোস্ট দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার অদম্য উদ্দীপনারই প্রতীক। এরা – অনেকেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক অন্যায়ের শিকার, কিন্তু তাদের চেষ্টায় রয়েছে একটি উজ্জ্বল স্বপ্ন: উন্নত জীবনের প্রত্যাশা।
আমেরিকার বিস্তৃত শিল্পক্ষেত্র, নির্মাণ, কৃষি ও সেবা খাতে অবদান রাখা এই শ্রমিকরা প্রতিদিন অসংখ্য কষ্টের মধ্যে কাজ করে থাকেন। তারা, যারা আইনের সীমার বাহিরে থেকেও, বিনা আশায় কিন্তু কঠোর পরিশ্রমে সেই দেশের অর্থনীতিতে শ্রীবৃদ্ধি করে যাচ্ছে। তাদের শ্রমের ছোঁয়ায়, ছোট থেকে বড় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সজীব থাকে। এদের অবদানে, আমেরিকার প্রতিটি অথনৈতিক মাপকাঠির গ্রাফগুলি এক নতুন গতিময়তা ও মানবিকতা প্রদান করে।
অবৈধ অবস্থানে থাকা ভারতীয় শ্রমিকরাই সে দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের চালিকা শক্তি।
ভারতের অবৈধ শ্রমিকরা আমেরিকার অর্থনৈতিক উন্নতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁদের আত্মত্যাগ, শ্রমদক্ষতা ও অবিচল মানসিকতা মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এক মানবিক সমাজে, যেখানেই থাকুক না কেন প্রতিটি শ্রমিকের অবদানকে সম্মানিত করা উচিত। এই প্রেক্ষাপটে, আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনা প্রয়োজন, যাতে তাদের মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়ের মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠিত হয়।