বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের গাজা অবরুদ্ধ এবং ওয়েস্ট ব্যাংকে চলমান মানবিক সংকটের মাঝে ইসরায়েল সরকারের ক্রমবর্ধমান সামরিক হুমকি ও নিষ্ঠুরতার কথা সর্বব্যাপী আলোচিত। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, যদি আগামী শনিবার দুপুরের মধ্যে হামাস আটক থাকা বন্দিদের মুক্তি না নিশ্চিত করে, তাহলে ইসরায়েল পুনরায় “তীব্র যুদ্ধ” শুরু করবে। এ ধরনের হুমকি কেবল যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে উস্কানি যোগাচ্ছে না, বরং আরও বেশি মানুষের জীবন ও নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
নেতানিয়াহুর হুমকিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আবার পূর্ণ মাত্রায় লড়াই শুরু করবে। এমন হুমকি আবারও সংঘর্ষের মাত্রা বৃদ্ধি করবে এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য কাঁটা হয়ে উঠবে।
হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি সংগঠন দাবি করছে, ইসরায়েল সরকারের চলমান সামরিক কার্যক্রম—যেমন গাজায় আক্রমণ, নর্থ ওয়েস্ট ব্যাংকে তলুকরেমসহ অন্যান্য শহরে যুদ্ধবন্দীদের সাথে সহিংসতা—চুক্তির মূল শর্তাবলী লঙ্ঘন করছে। এই লঙ্ঘন শুধুমাত্র শান্তির সম্ভাবনাকে ব্যাহত করছে, বরং মানবিক সংকটকে আরও জোরদার করছে।
ইসরায়েল সরকারের এই নিষ্ঠুর ও আগ্রাসী পদক্ষেপের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন স্পষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো উচ্চপদস্থ নেতাও গাজা নিয়ে জটিল পরিকল্পনা প্রস্তাব করলেও, মিসর, জর্ডান ও অন্যান্য আরব দেশ স্পষ্টভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এদিকে, কিছু দেশের মতামত অনুযায়ী, এ ধরনের হুমকি ও সামরিক পদক্ষেপ মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের কালো দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ইসরায়েল সরকারের উগ্র যুদ্ধনীতি কেবল রাজনৈতিক বা সামরিক কৌশলের মেয়াদে সীমাবদ্ধ নয়। গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাংকের সাধারণ জনগণের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, পাশাপাশি টুলকরেম ও নূর শামসসহ অবরুদ্ধ অঞ্চলে ঘর-বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল—সকলেই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবিরাম হুমকি ও আক্রমণের ফলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে এবং গাজার ভবিষ্যতের স্বপ্ন ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
চলমান সামরিক হুমকি ও আক্রমণের ফলে ইতিমধ্যেই গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি মানবিক সাহায্য ও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করে। এই নিষ্ঠুর যুদ্ধ মানুষের শান্তি ও স্থায়িত্বকে এবং স্বপ্নকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
ইসরায়েল সরকারের বর্তমান উগ্র ও নিষ্ঠুর সামরিক মনোভাব নিয়ে যেভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে তা মানবতার চোখে নিন্দনীয় অপরাধ। শান্তির প্রতি সহানুভূতি ও আন্তর্জাতিক আইনকে প্রাধান্য না দিয়ে, একপাক্ষিক সামরিক হুমকি শুধু আঞ্চলিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, বরং নিরীহ জনগণের জীবন ও নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে মানবিকতা, আন্তর্জাতিক বিধিমালা ও ন্যায়বিচারের আলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে অবিরাম সংঘর্ষ ও মানবিক সংকটের বর্ণনা ইতিহাসের পাতায় অন্ধকার দাগ হিসাবে না হয়ে যায়।