বিশ্ব অর্থনীতিতে মোদীর কারণে হারানো পঞ্চম স্থান ফিরে পেতে এখনও ৫ বছর লাগবে ভারতের, ২০৩০ এ চীন হবে বৃহত্তম অর্থনীতি

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

baloonrise-thinkstock

সাইফুল্লা লস্কর : ১৯৯১ সাল, ভারতবর্ষের তৎকালীন বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার পৌঁছে ছিল মাত্র ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। চরম দুরাবস্থায় ধুঁকছিল অর্থনীতি। কিন্তু নরসিমা রাও এর অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের এলপিজি ফর্মুলার ফলে ভারতবর্ষের অর্থনীতি সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্রমশ হয়ে উঠেছিল বিশ্বের দ্রুততম বৃহৎ অর্থনীতি। মোদি সরকার ২০১৪ ক্ষমতায় আসার সময় ভারতবর্ষের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার পৌঁছেছিল ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত বর্ষের অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে প্রতিটা পদক্ষেপে। নোট বন্দি, জিএসটি এর মত অপরিকল্পিত এবং উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে পড়ে ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদন্ড। বেকারত্বের হার পৌঁছায় ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে। জনরোষের ভয়ে মোদি সরকার বন্ধ করে দেয় বেকারদের সংখ্যা গণনা করা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বিশ্বের দ্রুততম বিকাশশীল বৃহৎ অর্থনীতি পরিণত হয় বিশ্বের দ্রুততম হ্রাসমান অর্থনীতিতে। তার পরেও মনমোহন সিংয়ের হাতে গড়া মজবুত অর্থনৈতিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। তারই জোরে ২০১৯ সালে ভারতীয় অর্থনীতি যুক্তরাজ্যকে অতিক্রম করে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার গৌরব অর্জন করে। কিন্তু আবারও সরকারের অদূরদর্শী এবং ব্যর্থ অর্থনৈতিক নীতির ফলে সেই স্থান ২০২০ সালে হারিয়ে ফেলে যুক্তরাজ্যের কাছে।

৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করা ভারতীয় জিডিপি আবার নেমে আসে ৩ ট্রিলিয়ন এর নিচে। যদিও বেশির ভাগ অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে এই চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণ ভারতীয় অর্থনীতিতে করোনা মহামারী এবং তার জেরে দেশব্যাপী বলবৎ করা লকডাউনের ধাক্কা তবুও এটুকু অনস্বীকার্য যে ভারতীয় অর্থনীতি গত বেশ কয়েক বছর থেকে আর পূর্বের মত মজবুত এবং দ্রুতগামী নেই। এই শ্লথ গতির কারণ নোট বন্দি এবং জি এস টি এর মতো ব্যর্থ পদক্ষেপ।

সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ নামক যুক্তরাজ্যর কেন্দ্রিক এক সংগঠন দাবি করেছে ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের কাছে হারানো পঞ্চম স্থান আবার ফিরে পেতে ভারতবর্ষকে অপেক্ষা করতে হবে আরও পাঁচটা বছর। অর্থাৎ ২০২৫ সালে ভারত বর্ষ আবার বিশ্ব অর্থনীতিতে পঞ্চম স্থানে উন্নীত হবে। তারা আরও দাবি করেছে আগামী বছর ভারতীয় অর্থনীতি ৮% বার্ষিক হারে বৃদ্ধি পেলেও তার পরবর্তী বছরে তা হবে ৭% এভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে ২০৩৫ সালে ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.৩ শতাংশে।

আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হতে চলা ভারতের অর্থনীতি ২০২৭ সালে জার্মানি এবং ২০৩০ সালে জাপান কে পিছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। তবে ততদিনে ভারতবর্ষের উত্তরের প্রতিবেশী চীন বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক এবং সামরিক পরাশক্তি আমেরিকাকে অতিক্রম করে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি তে পরিণত হবে।

পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠে আসার এই খবরকে অনেকে ফলাও করে প্রচার করলেও বাস্তবতা হলো এই যে তখনও ভারতবর্ষের প্রতিটা মানুষের মাথাপিছু আয় পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বহু মায়ের পিছনে। তখনো ভারত বর্ষ বেকারত্বের এই চরম সংকট থেকে মুক্তি পাবে না। ভারতের ৪৪ শতাংশের বেশি মানুষ কৃষি নির্ভর হলেও জিডিপিতে এই খাতের অবদান মাত্র ১৫ শতাংশ। তাই কৃষি খাতের উন্নয়নে উপযুক্ত দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে ভারতের অর্থনীতি সঠিক পথে অগ্রসর হতে পারবে না। এখনও ভারতবর্ষের টাকার দাম আমেরিকার ডলারের তুলনায় অনেক দুর্বল। ভারতের শিল্প বৃদ্ধির হার চীনের অনেক পিছনে। ভারতের রপ্তানির পরিমাণ যে হারে বাড়ছে তা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। তাই মোদি সরকার এই সব বিষয়ে সঠিক নীতি গ্রহণ না করলে অর্থনৈতিক উন্নতির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর