
সমাজকে ও শিক্ষা জগতকে আরও একবার দেখালো আলোর দিশা মালদার গর্ব। এখানকার প্রতিভাবান গবেষক ড. শেখ সামিম আখতার আগামী সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার Kumoh National Institute of Technology-তে ‘Green Hydrogen Production’ বিষয়ক পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণার জন্য রওনা হচ্ছেন। তাঁর এই সাফল্য কেবল তাঁর ব্যক্তিগত অর্জনই নয়, বরং সমগ্র ইসলাম সম্প্রদায়ের জন্য অনুপ্রেরণার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ড. শেখ সামিম আখতার, শেরশাহীর রন্নুচক গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা মুহাম্মদ রাজু একজন দিনমজুর এবং মা সুফিয়া বানু একজন আশাকর্মী। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার মাঝেও ছোটবেলা থেকে তাঁর উজ্জ্বল মেধা ও কঠিন অধ্যাবসা তাকে শিক্ষা ও গবেষণার উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছে।

কালিয়াচক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর, ২০১১ সালে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়নবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের IIT Dhanbad-এ ‘Electrochemical Carbon Dioxide Reduction’ বিষয়ক গবেষণায় অংশ নিয়ে তাঁর গবেষণার পরিধি বৃদ্ধি পায়। এভাবেই, গবেষণার নানা স্তর পার হয়ে এখন সামিম নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে চলেছেন।

এছাড়াও, কালিয়াচকের আরেক উজ্জ্বল প্রতিভা, গোলাম মাসুদ বিশ্বাস, NTA পরিচালিত JEE (MAINS)–২০২৫ পরীক্ষায় ৯৮.২৯৫ শতাংশ নম্বর অর্জন করে মালদা জেলার গর্বের নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন। ২০২৩ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সে রাজ্যের মধ্যে সপ্তম স্থান অধিকার করে। এভাবেই সে তার জীবনে শিক্ষা জগতে একের পর এক সফলতার মাইল ফলক যুক্ত করে চলেছে।

এই সাফল্যগুলো প্রমাণ করে যে, সীমিত সুযোগ-সুবিধা ও প্রতিকূলতার মুখেও কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং মেধার মাধ্যমে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করা সম্ভব। ড. শেখ সামিম আখতার ও গোলাম মাসুদ বিশ্বাসের এই অর্জন আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার আলো যোগাবে, আর কালিয়াচকের শিক্ষার গতি ও মান উন্নয়নের পথ প্রসস্ত করবে।

বৈজ্ঞানিক বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার প্রতি সরকারের অপ্রতুল মনোযোগের ফলস্বরূপ, আমাদের দেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ক্রমশ বিদেশের দিকে ঝুঁকছে। উন্নত গবেষণা সুবিধা, সঠিক পরিকাঠামো ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে দেশে তাদের নিজস্ব কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।
বর্তমান বিশ্বে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি মূলত গবেষণা ও উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু, যখন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও নীতি নির্ধারণে সচেষ্ট হয় না, তখন তরুণ মেধাবীদের সঠিক সুযোগ ও সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে দেখা যায়। ফলে, যারা দেশেই থাকলে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারতেন, তারা উন্নত গবেষণা সুবিধা ও উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত বিদেশের প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্থানান্তরিত হয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতি কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতির কথা নয়, বরং দেশের সামগ্রিক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতাকেও প্রভাবিত করছে। দেশের ভবিষ্যৎ উদ্ভাবক ও গবেষকদের নিজ দেশে কাজে লাগানোর মতো পরিবেশ তৈরি না হলে, দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় উন্নয়নও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সরকারের উচিত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার প্রতি নতুন করে নজর দেয়া এবং প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ নিশ্চিত করা, যাতে দেশের প্রতিভাবান তরুণেরা নিজেদের মেধা ও উদ্ভাবনী ধারণাকে দেশেই কাজে লাগাতে পারে। এভাবেই দেশের গবেষণা ক্ষেত্র শক্তিশালী করে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি সুদৃঢ় বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ভিত গড়ে তোলা সম্ভব হবে।