আফগানিস্তানের পাঞ্জশিরভিত্তিক তাজিক নেতা আহমদ মাসুদের নেতৃত্বের বিদ্রোহীদের সাথে তালিবানের সংঘর্ষ পরবর্তী আলোচনা পর্যন্ত বন্ধ রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষের আলোচক দল। বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যমে এই খবর জানানো হয়।
এর আগে বুধবার কাবুলের উত্তরে পারওয়ান প্রদেশের কেন্দ্রে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পাঞ্জশিরের বিদ্রোহীদের পক্ষে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন রুশ আগ্রাসনবিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধের সাবেক নেতা আলমাস জাহিদ। অপরদিকে তালিবানের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তালিবান গোয়েন্দা বিভাগের উপপ্রধান মোহাম্মদ মোহসিন হাশিমি।উভয় পক্ষ তিন ঘণ্টার বৈঠক করে এবং পারস্পারিক বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করে।
পাঞ্জশির বিদ্রোহীদের প্রতিনিধি দলের সদস্য মোহাম্মদ আলম ইজেদইয়ার এক ফেসবুক বার্তায় জানান, উভয় পক্ষ পরবর্তী আলোচনার আগ পর্যন্ত পরস্পরকে হামলা না করার বিষয়ে সম্মত হয়।
তিনি বলেন, ‘তিন ঘণ্টার আলোচনার পর উভয় পক্ষ আলোচ্য বিষয় তাদের নেতৃত্বের কাছে উপস্থাপন করবে এবং দেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা অব্যাহত রাখবে।’
অপরদিকে তালিবান আলোচক দলের সদস্য আনামুল্লাহ সামানগানি জানিয়েছেন, পাঞ্জশির নিয়েই তাকিবান প্রতিনিধি দল আলোচনা করতে চাইলেও বিদ্রোহীদের প্রতিনিধি দল আফগানিস্তানের ভবিষ্যত সরকার কাঠামো নিয়ে আলোচনা করতে চায়। এর ফলে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় কোনো বাস্তব সমাধান এখনো আসেনি।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার জেরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় আফগানিস্তানের তৎকালীন তালিবান সরকার পিছু হটে।তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলে দেশটিতে।
দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দেশটি থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় ওয়াশিংটন। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালিবান সম্মত হয়।
চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালিবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্যে পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাতে শুরু করে তালিবান। মে থেকে অভিযান শুরুর পর সাড়ে তিন মাসের মাথায় ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলের অধিকার নেয় তালিবান যোদ্ধারা।
আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে তালিবান ৩৩টির নিয়ন্ত্রণ নিলেও কাবুলের উত্তরে পাঞ্জশির প্রদেশ রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধের কিংবদন্তি তাজিক নেতা আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে তালিবানবিরোধী প্রতিরোধ শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্র : নয়া দিগন্ত