ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে, ভোটের পরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিন্দুমাত্র বদলাননি। মুখে সহমতের কথা বলছেন, ঐকমত্যের শিক্ষা দিচ্ছেন, অথচ চলেছেন সংঘাতের পথে। নির্বাচন থেকে কিছুটা অন্তত শিক্ষা পেয়েছেন, তেমন সামান্যতম নিদর্শনও তিনি এই কদিনে রাখতে পারেননি বলেছেন কংগ্রেসের সংসদীয় দলের চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী
তামিলনাড়ু থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দু পত্রিকায় মতামতধর্মী নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘প্রচারের সময় যিনি নিজেকে ঈশ্বরের সমতুল্য বলে জাহির করেছিলেন, তাঁর কাছে এই নির্বাচন ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও নৈতিক পরাজয়। যে বিভাজন নীতি ও ঘৃণার রাজনীতি তিনি অনুসরণ করে চলেছিলেন, দেশের মানুষ তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। অথচ তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন, এত দিন যেভাবে চলেছেন, সেভাবেই চলবেন।’
তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দূতদের সরাসরিই বলা হয়েছিল, কংগ্রেস এই ক্ষেত্রে সরকারকে সমর্থন করতে প্রস্তুত। সরকারের মনোনীত ব্যক্তিকেই স্পিকার পদে মেনে নেবে। কিন্তু সরকারের উচিত প্রথা মেনে ডেপুটি স্পিকারের পদটি বিরোধীদের ছেড়ে দেওয়া। অথচ এই ন্যায্য চাহিদাটুকু সরকার মানল না।
সোনিয়া নিবন্ধে লেখেন, দ্বিতীয়ত, নিরপেক্ষ থাকা যাঁর ধর্ম সেই নবনির্বাচিত স্পিকারকে দিয়ে সরকার জরুরি অবস্থাসংক্রান্ত বয়ান দেওয়াল। এটা করার উদ্দেশ্য সংবিধানকে যেভাবে তারা পদদলিত করে চলেছে, তা থেকে দেশবাসীর দৃষ্টি ঘোরানো। অথচ ঘটনা হলো, ১৯৭৭ সালে দেশের মানুষ জরুরি অবস্থা জারির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল এবং সেই রায় কংগ্রেস দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নিয়েছিল। তার তিন বছর পর সেই পর্যুদস্ত দলটি যে বিপুল সংখ্যায় জিতে ফিরে এসেছিল, মোদি ও তাঁর দল তা কোনো দিন অর্জন করতে পারেনি।
সোনিয়া আরও লিখেছেন, ‘১৪৬ সদস্যকে বহিষ্কার করে সেই সরকার বিনা আলোচনায় বিতর্কিত দণ্ডবিধি বিল পাস করেছে। বহু বিশেষজ্ঞ ওই তিন আইন নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনার দাবি জানিয়েছেন। আমরাও তা-ই চাই। একই সঙ্গে পাস করানো হয়েছিল বন সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আইনের সংশোধন। প্রধানমন্ত্রীর আওড়ানো সহমত অনুযায়ী এগুলোও পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।’
‘নিট’-এর প্রশ্নপত্র ফাঁসসংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে বলেছেন, এ নিয়ে সরকার সংসদে আলোচনায় প্রস্তুত নয়। প্রধানমন্ত্রীও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন অথচ তিনি বারবার ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ করে থাকেন। এ কথা লেখার পাশাপাশি সোনিয়া বলেছেন, মূল সমস্যা গত ১০ বছরে শিক্ষাসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মকভাবে ধ্বংস করা।
সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সোনিয়া বলেছেন, শুরু হয়েছে রাজ্যে রাজ্যে বুলডোজার নীতি। তাদের লক্ষ্য বিচারের বাইরে সংখ্যালঘুদের চটজলদি শাস্তি দেওয়া। সাম্প্রদায়িকতায় খোলাখুলি উসকানি দেওয়া হয়েছিল। তা মানুষের মনে ভয়ের সঞ্চার করেছে। প্রধানমন্ত্রী হারিয়েছেন তাঁর মর্যাদা।
মণিপুর প্রসঙ্গে সোনিয়া লিখেছেন, ‘ক্ষমতা লাভের ১৫ মাসের মধ্যে মণিপুর জ্বলতে শুরু করেছে। তাকে জ্বলতে দেওয়া হয়েছে। অথচ এত প্রাণহানি, হানাহানি, হিংসা, ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী একবারও সেখানে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। এই কারণেই তাঁর দল সেখানে দুটি আসনই হারিয়েছে। কিন্তু তাতে এখনো তাঁর কোনো হেলদোল নেই।